গর্ভধারণে উচ্চঝুঁকি কী?
যে প্রেগনেন্সিতে মায়ের মৃত্যু হার ও মায়ের অসুস্থতা ও বাচ্চার মৃত্যু এবং বাচ্চার অসুস্থতা যদি বেড়ে যায়, সেগুলোকে আমরা বলি হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি।
আমাদের সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ২০ ভাগই হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। সুতরাং যদি এটাকে ভালোভাবে একটু বিশেষভাবে গুরুত্ব দিলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে যাবে।
গর্ভধারণে উচ্চঝুঁকিতে কারা?
যাদের বয়স অনেক বেশি হয়ে গেছে। ত্রিশের উপরে যদি বয়স হয়ে যায়, সেটাও কিন্তু প্রেগনেন্সি হয়, তাতেও কিন্তু, সেটা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। কারণ নরমালি ২০-২৯ বছর বয়স পর্যন্ত এটা পারফেক্ট টাইম বাচ্চা প্রেগনেন্সি হওয়ার। সুতরাং বয়স যদি বেশি হয়ে যায়, সেটা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। অথবা কোন নারীর উচ্চতা যদি অনেক কম থাকে, ৫ ফিটের নিচে থাকে, তাহলেও দেখা যায়, সেটাও হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। তাতে মায়ের মৃত্যুও বাড়তে পারে। এবং ডেলিভারিতে কমপ্লিকেশন হতে পারে। তাছাড়া আরো কতগুলা, যেমন বিএমআই বেশি হওয়া।
বিএমআই নরমালি ২২-২৪ থাকে তাহলে সেটা ভালো। যদি দেখা যায়, বিএমআই ২৫ এর উপরে হয়ে গেছে, ৩০ এর উপরে হয়ে গেছে তখনও সেটা হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। আর কতগুলো প্রেগনেন্সি ডিজিজ আছে। যেমন- প্রি-এক্লামশিয়া, এক্লামশিয়া, এনিমিয়া, ডায়াবেটিস এগুলো অনেক সময় প্রেগনেন্সিতে হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, রক্তক্ষরণ হয়। অথবা আগে যদি তার সিজারিয়ান সেকশন থাকে, অথবা তার যদি বার বার বাচ্চা নষ্ট হয়, সেইগুলোও হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। তাছাড়া কতগুলো মেডিকেল ডিজওয়াডার আছে, যেমন- কিডনি ডিজিজ, হার্ট ডিজিজ, লিভার ডিজিজ, এগুলো কিন্তু হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। তাছাড়া কতগুলো অপারেশন আছে, যেমন জরায়ুতে টিউমার হলো, তারপর টিউমারগুলো আমরা অপারেশন করি, মায়মেকটমি করি, সেটাও হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি। অথবা দেখা যাচ্ছে, বাচ্চা হওয়ার সময় যে পানি ভেঙে গেল, পানি ভাঙলে কি হলো, নাড় বের হয়ে যায়, বাচ্চার নাড় বের হয়ে যায়। অথবা হাত বের হয়ে যায়, এগুলাতেও কিন্তু মায়ের এবং বাচ্চার মৃত্যুহার বেশি হয়।
উচ্চঝুঁকি প্রতিরোধে জেনে নিন করণীয়
বাচ্চা হওয়ার আগেই যদি ওই দম্পতি বা একজন নারী চিকিৎসকের কাছে আসলে তার বিষয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ অথবা টিউবারকোলসিস অথবা কোনো ধরণের রোগ থাকলে সেইগুলোকে কন্ট্রোল করতে হবে। এসব রোগীদের প্রতি আমাদের পরামর্শ আগে ওই রোগের আমরা তাকে বলবো, আপনি প্রেগনেন্সি নেন। অথবা কোন মায়ের যদি, প্রিভিয়াসলি কোন কনজিনিটাল এনোমেলি চাইল্ড থাকে, তাদেরকেও আমরা স্ক্রীনিং করবো। সেটাকে বলে প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সিলিং। এখন আমাদের দেশে খুবই প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সিলিং হচ্ছে।
কারণ কী, এটা হলো বাচ্চা হওয়ার আগে, তার এক্সামিনেশন, তার হিস্ট্রি, হার এক্সামিনেশন চেকআপ করা, তারপর কী হলো, যখন একটা মা প্রেগনেন্ট হলো, সে কিন্তু অবশ্যই এন্টিনেন্টাল চেকআপে আসবে। এন্টিডেটাল চেকআপে যখন আসে তখনই তার এনিমিয়া ধরতে পারি, ডায়াবেটিস ধরতে পারি, তার প্রি-একলামশিয়া আছে কি-না, সেইগুলোও ধরতে পারি। তাছাড়া বাচ্চাটার গ্রোথ ঠিকমতো হচ্ছে কি-না, সেইগুলোও আমরা ধরতে পারি।
এখন আমি বলবো ডেলিভারি। ডেলিভারির সময় তার ডেলিভারি অবশ্যই অবশ্যই হাসপাতালে ডেলিভারি করাবে। হাসপাতালে ডেলিভারি করালে, যদি দেখা যায় বাচ্চার কোনো ডিসট্রেস হচ্ছে, সেটা ডাক্তাররা অবশ্যই ধরে ফেলে। এবং তাতেও বাচ্চার মৃত্যু হার কমে যায়, অনেক সময় ডেলিভারির পরে, দেখা যায়, সিবিআর ব্লিডিং হয়। ওনারা যদি হাসপাতালে ডেলিভারি করে, তাতেও কিন্তু এই রক্তক্ষরণ কমে আসে।
সুতরাং আমরা কি করবো, প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সিলিং, এন্টিনেটাল কাউন্সিলিং, ইন্টারনেটাল কাউন্সিলিং, এগুলো কউন্সিলিং করে, তাদের যদি ঠিকমতো আমরা ম্যানেজ করতে পারি, তাহলে দেখা যাবে, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার, অনেকাংশে কমে গেছে। সুতরাং আপনারা সবাই এলার্ট থাকবেন যেন প্রি-কনসেপশনাল কাউন্সিলিং প্রেগনেন্সিতে চেকআপ, ডেলিভারির সময় চেকআপ সবকিছু যেন করে, আমরা আমাদের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পারি।