দেশে প্রতিবছর শতকরা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ শিশু অপরিণত (প্রিম্যাচিউর) অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এ হিসেবে প্রতিদিন এক হাজার ৩৪০টি শিশু এবং ঘণ্টায় ৫৬টি শিশু প্রিম্যাচিউরড অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। যা প্রিটার্ম শিশু জন্মহারে সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিলন হলে ‘ডায়ালগ অন দ্য প্রিম্যাচিউরিটি বার্ডেন, এন্টারভেনশন স্ট্যাটাস অ্যান্ড ইনোভেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ বিভাগের সায়েন্টিস্ট আহমেদ এহসানুর রহমান। প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে প্রিটার্ম বার্থ রেটে পৃথিবীতে বাংলাদেশ এক নম্বর। আমাদের এ হার ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ। আগে আমরা দুই, তিন, চার নম্বরে ছিলাম।
এহসানুর রহমান বলেন, এর একটি খারাপ এবং ভালো দিক রয়েছে। খারাপ দিক আমরা এক নম্বরে। আর ভালো দিকটা হলো, আমরা প্রথম অবস্থানে থাকায় পুরো পৃথিবী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা এটা প্রতিরোধ করতে পারছি না। ফলে সারাবিশ্ব থেকে আমাদের সাপোর্ট পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রিম্যাচিউরড শিশু জন্মের সংখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সংখ্যাগত দিক থেকেও খারাপ অবস্থায় রয়েছি। এটা স্বাভাবিক বিষয় যে বড় দেশের সংখ্যা বড় হবে। এক্ষেত্রে আমরা ষষ্ঠ অবস্থায় আছি। আমাদের দেশে প্রায় ৫ লাখ শিশু প্রিটার্ম জন্মগ্রহণ করছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ১ হাজার ৩৪০টি এবং প্রতি ঘণ্টায় ৫৬টি শিশু অকালে জন্মগ্রহণ করে। এটা একটি অনুমান। অপরদিকে গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ অনুযায়ী সংখ্যাটি প্রায় ৮ লাখ।
এহসানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৭৪ শতাংশ ডেলিভারি হাসপাতালে হয়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ হয়ে যাবে। অর্থাৎ বেশিরভাগ বাচ্চা গাইনোকলজিস্ট, পেডিয়াট্রিক্স ও নিওনেটোলজিস্টদের কাছেই জন্মগ্রহণ করবে। ফলে প্রতি ঘণ্টায় জন্ম নেওয়া ওই ৫৬টি শিশু চিকিৎসার আওতাধীন থাকবে। ফলে তাদের বাঁচা ও সুস্থ জীবন লাভের সুযোগ তৈরি হবে, এটি একটি আশার দিক।
অপরদিকে লো বার্থাওয়েটের হারের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রতি ১০০টি নবজাতকের মধ্যে ২৩টি ওজন কম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সংখ্যাগত দিক থেকে তা ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে জানান আইসিসিডিআর,বির এই বিজ্ঞানী।
কর্মশালায় নিজের প্রেজেন্টেশনে বিএসএমএমইউর নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার শিশু প্রিম্যাচিউর ও কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে মারা যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গাইনোকোলজিস্ট অধ্যাপক লায়লা আন্জুমান বানু বলেন, গত কয়েক বছরের চেষ্টাতেও আমরা প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্মগ্রহণ সংখ্যা কমাতে পারিনি। অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে আমরা জানি না কেন প্রিটার্ম বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে। তবে এক্ষেত্রে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। যেমন– ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, কিডনি ডিজিজ, মাল্টিপল প্রেগনেন্সি ও তামাকের ব্যবহার। এসব কারণে প্রিমেচিউর বাচ্চা হওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। আমরা এটা কমাতে চাই। কিন্তু যেহেতু আমরা এর কারণ জানি না, তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেব। আর যেখানে কারণ জানি সেক্ষেত্রে প্রতিরোধের চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ও প্রেশারের রোগীর এগুলো নিয়ন্ত্রণে এনে এরপর গর্ভধারণের পরামর্শ দেব।
সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের নব দম্পতিরা আমাদের কাছে গর্ভধারণের ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসে। এটি একটি ভালো দিক। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে।