ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত ঢাকাফেরত গরু

0
89
ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার গরু খামারি ও ব্যাপারীরা এবার বেশ লোকসানে পড়েছেন। ঢাকায় নেয়া অধিকাংশ গরুই বিক্রি না হওয়ায় ফেরত আনতে হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা ফেরত গরুগুলোর ক্ষুরা রোগ দেখা দেয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে বলে জানান এ অঞ্চলের খামারিরা।

আলমডাঙ্গার কৃষ্ণপুর গ্রামের গরু ব্যাপারী মিনা ও ভাগনে সন্টু এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী। ঈদুল আজহায় কয়েকশ গরু বেচাকেনা করেন তারা। প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকা লাভের মুখ দেখলেও মামা-ভাগনে এবার পড়েছেন লোকসানে। ঢাকায় কোরবানির হাটে গরু কেনাবেচা করে এবার প্রায় ৩০ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছেন তারা। পাশাপাশি ঢাকা ফেরত গরুগুলোর ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়েছে লোকসানের পরিমাণ।

একই রকমভাবে ঢাকায় গরু নিয়ে ফতুর হয়েছেন একই গ্রামের গরু ব্যাপারী রফিকুল ওরফে রফি। লোকসানের কারণে তিনি লাভের বদলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

ঢাকা ফেরত গরু এখনও বেচে শেষ করতে পারেননি ব্যাপারীরা। ঢাকা ফেরত সব গরুই ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে গরুর ব্যাপারীরা পড়েছেন বেকায়দায়। বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন গরু। চড়া দামে কেনা গরু কসাইদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করায় ব্যবসায়ীদের পুঁজিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি গরু পালন করা হয়ে থাকে। এখানকার বেশির ভাগই প্রান্তিক কৃষক গরু লালনপালন করে থাকেন বাড়িতে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ ধরনের গরু লালনপালন শুরু হয় এখানে। কৃষকের স্ত্রীরাই বেশি সময় দেন গরু লালনপালনে। গরু লালনপালনকারীদের মধ্যে আছেন অনেক বড় বড় খামারিও।

এ উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরের কৃষক নিফাজ উদ্দিন মোল্লা একজন বড় খামারি। তিনি প্রতিবছর ২০-৩০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন। এবার গরুর দাম না পেয়ে এ খামারির আহাজারির শেষ নেই।

কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে রফি ব্যাপারী এবার ১০টি গরু ঢাকায় নিয়ে যান। কয়েকটি গরু লোকসানে বিক্রি হলেও বাকি গরু বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। ঈদের পরদিন তার বাড়িতে এ নিয়ে কান্নাকাটি শুরু হয় বলে গ্রামের লোকজন জানান।

একই গ্রামের বড় গরু ব্যবসায়ী সন্টু ব্যাপারী বলেন, ‘এ বছর বড় বড় ১৭টি গরু ঢাকায় নিয়ে যাই। কয়েকটি গরু বিক্রি হলেও ঈদের পরদিন অধিকাংশ গরু ফেরত আনি। সব মিলিয়ে এই কোরবানিতে আমার ১৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। একইভাবে লোকসান গুনেছেন আমার ছোট মামা মিনা ব্যাপারীও।’

সন্টু আরও বলেন, ‘ঢাকা ফেরত সব গরুর পায়ে ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে। এ কারণে গরুগুলো না খেয়ে কাবু হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কসাইদের কাছে লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছি গরু।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার আবদুল্লাহিল কাফি জানান, উপজেলায় এ বছর কোরবানির জন্য ৩০ হাজার গরু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ হাজার গরু খামার ও স্থানীয় হাটগুলোতে বিক্রি হয়ে যায়। বাকি ১৮ হাজার গরু নেয়া হয় ঢাকার কোরবানির পশুহাটগুলোতে। কাঙ্ক্ষিত মূল্যে গরু বিক্রি না হওয়ায় ৩০ ভাগ গরু ফিরিয়ে এনেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।