প্রকৃতি ও প্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করা এবং দায়িত্বশীল পর্যটনের মাধ্যমে তাদের উপার্জনের পথ খুলে দেওয়া যে কার্যকর হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত বেড়ে চলেছে৷ আফ্রিকার এক দেশও সেই পথ অনুসরণ করছে৷
সিয়েরা লিওনের পশ্চিম উপকূলে যে সব প্রজাতির পাখি দেখা যায়, সেগুলির মধ্যে ভিলেজ উইভার্স, ফিঞ্চ ও পেলিকান অন্যতম৷ পানির উপর কিছুদূর এগোলে সবচেয়ে বেশি পাখি চোখে পড়ে৷
আব্দুলাই দাউদার কাছে জায়গাটি স্বর্গের মতো৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘ইয়রি বে সিয়েরা লিওনের অন্যতম সুন্দর এলাকা৷ সেখানকার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে স্থানীয় প্রজাতির পাখির বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো৷ এটি গোটা দেশে পাখি সংরক্ষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা৷”
ইয়রি বে-র হাজার হাজার হেক্টর এলাকায় জোয়ার-ভাটার কারণে কাদায় ভরা জমি ও ম্যানগ্রোভ জঙ্গল রয়েছে৷ ৪৬ হাজার ফুটবল মাঠের তুলনায় বড় এই জলাভূমি হেরন ও ওয়েডারের মতো পরিযায়ী পাখির বাসভূমি৷
সিয়েরা লিওনের কনজারভেশন সোসাইটি ও আফ্রিকান বার্ড ক্লাবের অর্থায়নে গঠিত অনেক স্থানীয় বার্ডিং ক্লাবের কাছে ইয়রি বে অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য৷ স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ জোরালো করাই এর উদ্দেশ্য৷
বার্ড ক্লাবের সদস্যরা দেশের নিজস্ব পাখির প্রজাতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন৷ সিয়েরা লিওনের প্রত্যন্ত অংশে পক্ষীবিদরা কখনো ঠিকমতো গবেষণা চালাতে পারেন নি৷
একটি অ্যাপের মধ্যে পাখি সম্পর্কে তথ্য ভরা হয়৷ সেটি বিভিন্ন প্রজাতি শনাক্ত করতেও সহায়তা করে৷ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের সেন্সাসের সময়ে তারা ৪৪টি প্রজাতি শনাক্ত এবং ২২,০০০-এরও বেশি পাখির গণনা করেছেন৷ বার্ড ক্লাবের সদস্য অ্যাডামা তোরোনকা বলেন, ‘‘এই অ্যাপ অত্যন্ত জরুরি, কারণ অ্যাপের মাধ্যমেই আমরা নানা প্রজাতির পাখি, বিশেষ করে পরিযায়ী পাখি, জঙ্গলের পাখি দেখতে পাই৷ সেগুলি কীভাবে ওড়ে ও ডাকে, তাও জানতে পারি৷’’
ইয়রি বে পাখির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেই বাসস্থান অত্যন্ত নাজুক৷ সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি থাকলেও ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের অংশবিশেষ কেটে ফেলে চাষবাস ও চারকোলের জন্য গাছ কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
সংরক্ষণবাদীরা চান, এলাকাটিকে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব দেওয়া হোক৷ পক্ষীবিদ ও বার্ড ক্লাবের সদস্যদের সংগৃহীত তথ্য সেই আবেদনকে আরও জোরালো করছে৷ ওয়েটল্যান্ড প্রোটেকশন অফিসার হিসেবে সামুয়েল কোবা মনে করেন, ‘‘ব়্যামসার সাইট হিসেবে যোগ্যতা পাবার অন্যতম শর্ত হলো, জায়গাটিকে পাখির এলাকা হতে হবে এবং সেখানকার পাখির সংখ্যা গোটা বিশ্বের পাখির সংখ্যার কমপক্ষে এক শতাংশ হতে হবে৷ সিএসএসএল-এর গবেষণা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা এক শতাংশের বেশি, অর্থাৎ কোটার তুলনায় সংখ্যাটা বড়৷ ফলে ব়্যামসার সাইট হবার পক্ষে জোরালো যুক্তি রয়েছে৷’’
পক্ষীবিদ হিসেবে মোমো সেসে মনে করেন, সরকারি ব়্যামসার সার্টিফিকেশন শুধু দেশে সংরক্ষণের উদ্যোগই জোরালো করবে না, আরও পর্যটক আকর্ষণ করবে৷ বার্ডিং ট্যুর এখনো দেশের পর্যটন খাতের সামান্য অংশ থাকলেও এর গুরুত্ব বেড়ে চলেছে৷ সিয়েরা লিয়ন গোটা বিশ্বের উৎসাহী বার্ড-ওয়াচারদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে৷ পক্ষীবিদ মোমো সেসে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘‘২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি সিয়েরা লিয়ননে বার্ড ট্যুর করছি৷ অনেক বার্ড কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে৷ বিশেষ করে বার্ড ট্যুর পর্যটনের ক্ষেত্রে আমি অনেক বৃদ্ধি লক্ষ্য করছি৷ সেটাই বেশ কিছুকাল ধরে আমার উপার্জনের মাধ্যম৷”
ইয়রি বে এলাকার উপকূলবর্তী ইকো সিস্টেম আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের অন্যতম৷ স্থানীয় বার্ড ক্লাবগুলি সেই এলাকার গুরুত্ব বাড়াতে সহায়তা করছে৷ ফলে সেই প্রাকৃতিক বাসভূমির অস্তিত্ব টিকে থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে৷