দ্রুত হাঁটলে আয়ু বাড়ে!

0
59
হাঁটা
ছবি: সংগৃহীত

স্টুটগার্ট শহরের এক হাসপাতালের মুভমেন্ট ল্যাবে ব্যস্ততার পরিবেশ৷ মোবিলিটি গবেষক হিসেবে লার্স শ্ভিকার্ট রোগীদের সঞ্চালনের মাত্রা ও মান যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে চান৷ জুতোর মধ্যে প্রেসার সেন্সর পায়ের নিচে চাপ পরিমাপ করে৷ এভাবে ক্লাউস ব্রেনার নামের এক স্বেচ্ছাসেবীর হাঁটাচলা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷ তিনি শুরু থেকেই এই গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন৷

লার্স শ্ভিকার্ট তার সারা শরীরে বেশ কয়েকটি সেন্সর ও রিফ্লেক্টর বসিয়েছেন৷ দৈনিক ব্যবহারের যোগ্য একটি মাত্র সেন্সরের মাধ্যমে এমন নিখুঁত পরিমাপ সম্ভব কিনা, গবেষক হিসেবে তিনি সেটা জানতে চান৷ বার্ধক্য বিষয়ক গবেষক ক্লেমেন্স বেকারও ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে মোবিলিটি বড় বিষয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন৷ প্রো. বেকার বলেন, ‘আমরা চাই, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি নতুন ওষুধ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মোবিলিটির উন্নতি অথবা অবনতির বিষয়টিও যেন বিবেচনা করা হয়৷ বর্তমানে আমরা সেটা জানি না৷’
সঞ্চালনের এমন প্যাটার্ন তথ্যের উৎস হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে৷ কোনো রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা, চিকিৎসার সাফল্য, ওষুধের কার্যকারিতার বিশ্লেষণ অথবা রোগের বিকাশের উপর নজর রাখার ক্ষেত্রে সেই সব তথ্য কাজে লাগবে৷ প্রো. ক্লেমেন্স বেকার বলেন, ‘আমরা হাঁটার গুণমান পরিমাপ করতে পারি৷ যেমন হাঁটার ছন্দে অনিয়ম থাকলে সেটিকে আমরা গেট ভেরিয়েবিলিটি বলি৷ অথবা কেউ যদি নিজের জয়েন্টের উপর চাপ এড়াতে খুঁড়িয়ে চলে, সেটা আর্থ্রোসিস বা ভাঙা হাড়ের লক্ষণ হতে পারে৷’

বিজ্ঞানীরা সত্যি একটি মাত্র সেন্সরের মাধ্যমে কোনো মানুষের জটিল সঞ্চালন পরিমাপ করতে সফল হয়েছেন৷ সেটির মাধ্যমে দিনের পর দিন ধরে কোনো রোগী বা ক্লাউস ব্রেনারের মতো স্বেচ্ছাসেবীর মুভমেন্ট ডেটা বিশ্লেষণ করা সম্ভব৷ ক্লাউস বলেন, ‘বয়স বাড়লে সঞ্চালন আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আমরা জানি, স্নায়বিক অর্থাৎ মস্তিষ্কের ক্রিয়ার উপর এর গভীর প্রভাব রয়েছে৷ তাছাড়া আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়৷ সব জগারই সেটা বলেন৷ এন্ডোরফিন হরমোনের কারণে মানুষ কিছু করলে আরও খুশি হয়৷ সে কারণে আমিও খুশিমনে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি৷’

ক্লেমেন্স বেকার ও লার্স শ্ভিকার্ট সারা সপ্তাহ ধরে সেন্সরের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটা চিত্র পাচ্ছেন৷ সেই সেন্সর তিনটি স্পেশিয়াল অ্যাক্সিসের সবকটির সঞ্চালন নথিভুক্ত করেছে এবং মোশান কার্ভও সৃষ্টি করেছে৷ সেই লক্ষ্যে আলাদা করে তৈরি অ্যালগোরিদম সেই সব তথ্য ঘেঁটে হাঁটার সময় গতি, পরিমাণ, ভেরিয়েন্স, দৈর্ঘ্য ও সিমেট্রি সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরেছে৷ রোগী সারা দিনে আদৌ কতটা সঞ্চালন করেন, কোন সময়ে এবং কতক্ষণ হেঁটেছেন, সাইকেল চালিয়েছেন অথবা সিঁড়ি চড়েছেন, সে সব স্পষ্ট দেখা যায়৷ এমনকি সঞ্চালনের গুণমান অথবা চলার সময় প্রতিবন্ধকতাও নথিভুক্ত করা হয়৷

এক আন্তর্জাতিক কনসর্টিয়াম ‘মোবিলাইজ ডি’ নামের প্রকল্পের আওতায় সে বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছে৷ সমাজে বয়স্ক মানুষের অনুপাত বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে মোবিলিটি সংক্রান্ত তথ্য নতুন ওষুধ ও থেরাপি সৃষ্টির কাজে সহায়তা করতে পারবে৷ প্রো. ক্লেমেন্স বেকার বলেন, ‘আমরা জানি, যে সব মানুষ সেকেন্ডে এক দশমিক দুই মিটারের চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে হাঁটে, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি৷ যম তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না৷ আমরা জানি, যে সব মানুষ ধীরে চলে, সেকেন্ডে শূন্য দশমিক আট মিটার অতিক্রম করে, সে যমের পাল্লায় পড়তে পারে৷ অর্থাৎ এক অর্থে গতি এমনকি কোলেস্টরল বা রক্তচাপের মাত্রার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশাল পরিমাণ তথ্য তা স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে৷ সে কারণে মুভমেন্ট ভীষণ জরুরি৷’