চলতি বছর ডেঙ্গুতে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে গর্ভবতী নারীরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হলে মায়ের জটিলতা বাড়ে বহুগুণ। প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপরও। আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
বিশ বছর বয়সি সানজিদা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পুরো সময়টাতেই ছিলেন অনেক বেশি সতর্ক। কিন্তু হয়নি শেষ রক্ষা। এক সপ্তাহ আগে ধরা পড়ে ডেঙ্গু। দেরি না করে আক্রান্তের পরের দিনই ভর্তি হন রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
পাঁচ ছয়দিনের সেবায় সানজিদার জ্বর অনেকটা কমে এলেও গত কয়েকদিনে কমেছে গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া। আর তাই রাজ্যের দুশ্চিন্তা ভর করেছে সানজিদা ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে।
সানজিদার মা বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক সতর্ক ছিলাম। কিন্তু তারপরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেল। গর্ভাবস্থার এ সময়টাতে এমনিতেই অসুস্থ। এর মধ্যে আরেকটা রোগে আক্রান্ত হলো। এখন নড়াচড়া কম। তাই ভয় লাগছে।
চলতি বছর সারা দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে আক্রান্তের পরিসংখ্যানে নারী রোগীর হার পুরুষের তুলনায় কম হলেও মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে আছে নারীরা। ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীদের জটিলতাও কোনো অংশে কম নয়। পুরুষের তুলনায় অনেকে হাসপাতালে আসতে দেরি করেন।
এক নারী বলেন, ডেঙ্গু জ্বরটা ওপর দিয়ে তেমন বুঝা যায় না। কিন্তু ভেতরের দিক থেকে খুবই কষ্ট হয়। ৪ থেকে ৫ দিন পর গত বৃহস্পতিবার আমি হাসপাতালে এসেছি। আরও আগে হাসপাতালে আসলে হয়ত আরও আগে ভালো হয়ে যেতাম।
চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। তবে মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে নারীরা। এ পর্যন্ত নারী ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর হার ৫৮ শতাংশ। তবে শঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে গর্ভবতী নারীর ডেঙ্গু। ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর ১৫ থেকে ২০ শতাংশই গর্ভবতী।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডা. রাহনুমা পারভীন বলেন, নারী রোগীরা হয় দেরিতে আসে, না হয় একটু বেশি খারাপ হওয়ার পর আসে। তারা হাসপাতালে ভর্তিই হয় দেরিতে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে আমাদের একটু বাড়তি যত্ন নিতেই হবে। ডেঙ্গুর কারণে যেহেতু প্লাজমা লিকেজ হচ্ছে, প্রেসার কমে যাচ্ছে- এর প্রভাবটা স্বাভাবিকভাবে বাচ্চাদের ওপরও পড়বে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর ডেঙ্গু হলে গর্ভের সন্তানের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে উল্লেখ করে এই সময়টাতে পরিবারের সদস্যদের অনেক বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।