আমরা জানি সঙ্গীতের সাথে পিঠা কিংবা খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ গান গায়তে গায়তে পিঠা বানায় এমনটাও শুনিনি, কিংবা পিঠা বানাতে গিয়ে কেউ গান গায় এমন কোনো সংস্কৃতিও আমাদের নেই। তবুও সঙ্গীত ও পিঠার সাথে একটি সম্পর্ক আছে। সংস্কৃতির প্রসঙ্গ যেহেতু এলো তাই পিঠা আর সঙ্গীতের সম্পর্ক নির্নয় করার আগে আমাদের সংস্কৃতির ইতহিাস ঐতিহ্য নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো আমাদের সঙ্গীত। জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, ধামাইল ইত্যাদি কতশত সঙ্গীতের সুর যে আমাদের গ্রাম-বাংলার রূপ রসের সঙ্গে মিশে আছে, সেটা আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকালেই আমরা জানতে পারি। বহু প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন রকমের গানের আসর বসত। এই গানের আসরের অধিকাংশ আসর বসত শীতকালে। চাদর গায়ে জড়িয়ে মানুষ সারা রাত জেগে গান শুনতো। কালের বিবর্তনে সেই সঙ্গীত আর ঐতিহ্য দুটোই প্রায় হারাতে বসেছে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানান সময়ে লোকসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়। এ তো গেল গ্রামেরগঞ্জের কথা। কিন্তু শহরে কী হয় ? শহরে অনেক কিছুই হয়, আবার কিছুই হয় না। তবে ২০১৩ সালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু করেছিল ৫দিন ব্যাপী ধ্রুপদী গানের আসর। যে সকল শিল্পীদের নাম শুনলেই শরীরে শিহরণ জেগে উঠত, সেই সকল কিংবদন্তী শিল্পীদের আমন্ত্রণ করে হাজির করেছিল ঢাকার দর্শক শ্রোতদের সামনে। সারা রাত চলত ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত। গ্যালারি ভর্তি শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনতো সেই ধ্রুপদী সঙ্গীতের সুর। আহা সে কী শিহরণ জাগানিয়া মুহূর্ত। ২০১৩ সাল থেকে টানা তিন চার বছর চললো এই সঙ্গীত উৎসব। তারপর কোনো এক অজানা কারণে সেই উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হলো। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হলো মাঠ বরাদ্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্নটা এখানেই। শীত এলে এই শহরে এখন নানারকম পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। কিন্তু আমাদের সেই ধ্রুপদী গানের আসর এখন আর বসে না। যে শহরে গানের বদলে পিঠা উৎসবের আয়োজনকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। সেই শহর একদিন ধ্বংস হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার ফিরে আসুক, সেই সুর। আবারও শীতের কুয়াশায় সুরের মূর্ছনার জেগে থাকুক এই নগর। এমনটাই প্রত্যাশায় ঢাকাবাসীর। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে সঙ্গীত মনকে প্রশান্তি দেয়। মানসিক সাস্থ্যের জন্য সঙ্গীতের ভূমিকা অপরিসীম।