পরিবেশ দূষণে যে প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে

0
85
পরিবেশ দূষণ
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের দূষণ-প্রবণ এলাকাগুলোর প্রায় ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণ্ণতায় ভুগছেন বলে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে – যা কম দূষণ আক্রান্ত এলাকার চাইতে বেশি। গবেষণাটিতে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পরিমাপ করা হয়।

তবে বায়ু দূষণের এই দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক প্রভাবের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এরইু মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

‘প্লেন থেকে নামলেই টের পাই’

ঢাকার বাসিন্দা দিয়া আক্তার বছরে একাধিকবার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি ঢাকার সাথে বিশ্বের অন্য শহরগুলোর সবচেয়ে বড় যে পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন – সেটি হল বাতাসের মান। টানা কয়েকদিন দেশের বাইরে থাকার পর ঢাকায় পা রাখতেই তিনি বুঝতে পারেন, প্রতিনিয়ত কি দূষিত বাতাসের মধ্যে এই শহরের মানুষ বসবাস করছে।

তিনি বলেন, ‘আমি ট্রিপটা শেষ করে যখনই প্লেন থেকে নামি সাথে সাথেই যেটা খেয়াল করি প্রচণ্ড ধুলাবালি, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, ঠোঁটে বালু লেগে যাচ্ছে। এর সাথে মানিয়ে নিতে ভীষণ কষ্ট হয়। বিষণ্ণ লাগে। কোন কাজ করতে ইচ্ছা হয় না।’

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইমুনা চৌধুরীর বলছেন, প্রতিটি দিনের কয়েক ঘণ্টা সময় যাতায়াতেই চলে যায় তার। এ দীর্ঘ সময়ে ভয়াবহ বায়ু দূষণের মধ্যে থাকার কারণে তার মন-মেজাজে খারাপ প্রভাব পড়ে বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘রাস্তার যে ধুলাবালি, গাড়ির ধোঁয়া- পুরো চার-পাঁচ ঘণ্টাই আমাকে এর মধ্যে থাকতে হয়। বাসায় যখন ফিরি আমার শরীরে এতোটুকু শক্তি থাকে না, এতো ক্লান্ত লাগে যে পরদিন আবার ক্লাসে যেতে ইচ্ছা করে না।’

প্রায় দুটি সিগারেটের ক্ষতির সমান

বায়ুদূষণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকায় যানজট ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ১৫০% বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয় তা ১৩৬% বেশি।

সিলেটে সবচেয়ে কম দূষণ হচ্ছে বলা হলেও সেখানকার বাতাসও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ৮০% বেশি দূষিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা থেকে ১% দূষণ বাড়লে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, ঢাকায় সারা দিনে একজন যে পরিমাণে দূষিত বায়ু গ্রহণ করেন, তা প্রায় দুটি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিকর।

মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব
বায়ু দূষণে কারণে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার।

তিনি জানান, মানুষ যে প্রকৃতি ও পরিবেশ বসবাস করছে সেটির ভারসাম্য না থাকলে মানসিক চাপ তৈরি হয় – যা মানুষের ‘ওয়েল বিইং’ বা ভালো থাকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তবে শুধু বায়ুদূষণই যে বড় ধরণের মানসিক রোগ তৈরি করে – বিষয়টা এমন নয়। তার মতে, যারা অল্পতে উদ্বিগ্ন হন তাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা বায়ু দূষণের ফলে তীব্র হয়ে ওঠে। যার কারণে মনোযোগে সমস্যা হতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে বলে তিনি জানান।

বায়ু দূষণের মূল কারণ
গবেষণায় বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎসের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হল যানবাহনের ধোঁয়া বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ধোঁয়া – যা বেশ মারাত্মক। এরপরই রয়েছে শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট ধুলা। তৃতীয় স্থানে আছে ইটভাটার ধোঁয়া।

গত তিন বছর ধরে বায়ুর মান সূচকে ঢাকা সবচেয়ে দূষিত না হলেও দ্বিতীয় দুষিত শহর হিসেবে স্থান পাচ্ছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্ণতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা।