মানুষের আয়ু ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়ার জন্য যেসব খাবার দায়ী সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চিনি। অনেকে খাবারের স্বাদ ভুলতে না পারায় চিনির বদলে বেছে নেন গুড়কে। কিন্তু এতে কি বিপদ কমে শরীরে সুস্থতার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, এ প্রশ্ন বেশিরভাগ মানুষের মনেই উঁকি দেয়। আসুন, সে উত্তর খুঁজে নিই আজকের আয়োজনে।
পুষ্টিবিদদের মতে, রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এমন খাবার খাওয়া বিপদের কারণ হতে পারে। তাই চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে ভীষণ সুস্বাদু হলেও তা এড়িয়ে চলা উচিত।
কেননা রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা কিংবা বেড়ে গেলে বিপাকক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে পেটে গোলযোগ, হজমে সমস্যাসহ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তাহলে কি চিনির বদলে গুড় বেছে নেয়া নিরাপদ- এমন প্রশ্ন মাথায় চলে আসতে পারে। আমেরিকান হেলথলাইন থেকে আসুন তার বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আখের রস থেকেই তৈরি হয় চিনি ও গুড়। তবে আখের রসকে ফুটিয়ে তা থেকে গুড় তৈরি হয়। অন্যদিকে ফুটন্ত আখের রসকে পরিশোধিত (ফিল্টার) করে চিনি তৈরি করা হয়।
চিনির তুলনায় গুড় তৈরি করতে একাধিক বার আখের রসকে ফুটাতে হয়। এ কারণে পরিশোধিত চিনির তুলনায় গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে।
আপনি জানলে অবাক হবেন, চিনির তুলনায় গুড়ে বিশেষ করে বাদামি ও গাঢ় খয়েরি রঙের গুড়ে ডিমের চেয়ে বেশি আয়রন, দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম এবং অন্য যেকোনো খাবারের চেয়ে বেশি পটাসিয়াম থাকে।
গুড়ে আয়রন বেশি থাকায় এটি রক্তস্বল্পতা (অ্যামেনিয়া) রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করতে পারে গুড়। যদি প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন তবে নিয়মিত গুড় খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
এছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গুড় রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গুড়ে থাকা পলিফেনল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের ফ্রি র্যাডিকেল, কোরোনিক ইলনেস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি (মুটিয়ে যাওয়া) এমনকি ক্যানসারের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারে। হাড় ও চুলের সুরক্ষা নিশ্চিতেও নিয়মিত খেতে পারেন গুড়।
বিজ্ঞানে প্রমাণিত না হলেও, গুড়ের আরও যেসব কথিত সুবিধা আছে বলে ধরে নেয়া হয় মনোযোগ ঘাটতি (হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার), আর্থাটাইস সমস্যা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার অভারসাম্যে ভালো কাজ করতে পারে গুড়।
তাই চিনির পরিবর্তে গুড় বেছে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে সবচেয়ে ভালো হয়, যেকোনো খাবার চিনি ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস করা। আর গুড় যদি খেতেই হয় তবে দিনে ৫০ গ্রামের বেশি খাবেন না। এতে আপনি যেমন নীরোগ থাকতে পারবেন, আবার বয়সকে ধরে রেখে দীর্ঘসময় নিজেকে সুন্দরও রাখতে পারবেন।






