প্যারাসিটামলও মিলছে না নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

0
156

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা ১৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪-৫ শতাধিক রোগী ডাক্তার দেখান। সেই সঙ্গে জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ৭০-৮০ জন ডায়রিয়া, জ্বর ও ডেঙ্গুজ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।

গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালটিতে ওষুধ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কিন্তু বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীরা ওষুধ না পেয়ে ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে ওষুধ না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ৭০ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্য ৩৩ প্রকারের ওষুধ সংকট রয়েছে। জ্বর ও ব্যথানাশক ৬ প্রকারের ওষুধের মধ্যে ৩ প্রকার ওষুধ সংকট। অ্যান্টিবায়োটিক ১২ প্রকারের ওষুধের মধ্যে ৬ প্রকারের ওষুধ সংকট রয়েছে। অ্যান্টিহিস্টামিন ৭ প্রকারের ওষুধের মধ্যে ৫ প্রকার ওষুধ সংকট। গ্যাস্টিকের ৬ প্রকারের ৩ প্রকারে ওষুধ সংকট। প্রেসার এর ১০ প্রকারের ৩ প্রকার ওষুধ সংকট। সিরাপের ১১ প্রকারের মধ্যে ৪ প্রকার ওষুধ সংকট, ভিটামিন ৬ প্রকারের ওষুধের মধ্যে ৪ প্রকার সংকট, অন্যান্য ১০ প্রকারের ওষুধের মধ্যে ৫ প্রকার ওষুধ সংকট। এ ছাড়াও জরুরি বিভাগে স্যালাইন, খাওয়ার স্যালাইন, ইনজেকশন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ওষুধ সংকটের কারনে হাসপাতালের বাহিরে ফার্মেসি থেকে বেশি দামে কিনতে হয়।

নাম না প্রাকাশ করা শর্তে কয়েক জন হাসপাতালের কর্মচারী বলেন, ডাক্তারের কম্পাউন্ডার মাহাবুবুল হক, মোসলে উদ্দিন, ফার্মেসিস্ট তারেক, আলাউদ্দিনসহ একটি গ্রুপ প্রতিমাসের প্রথম দিকে বা হাসপাতালে ওষুধ আসলে পছন্দের ডাক্তারদের দিয়ে নামে বেনামে টিকেট কেটে পুরো এক মাসের ওষুধ তুলে বাইরে নিয়ে যায়। পরে ওই ওষুধ উপজেলা বিভিন্ন বাজারে ও তাদের স্ব স্ব ফার্মেসিতে বিক্রি করে।

হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বাঙ্গড্ডা গ্রামের রোগীর মা মাহমুদা বেগম (৫২) বলেন, আমার মেয়েকে গত বৃহস্পতিবার জ্বর, মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই গত তিনদিনে স্যালাইন, প্যারাসিটামলসহ সকল ওষুধ ফার্মেসি থেকে কিনে আনি, এ ছাড়া হাসপাতালের ওয়াশ বেসিং নষ্ট, বাথরুমের বেহাল।

অভিযুক্ত ডাক্তারের কম্পাউন্ডার মাহাবুবুল হক বলেন, তিনি কোনো সরকারি ওষুধ নেন না। তবে পৌর সদরের নাগওদা গ্রামের তার একটি ফার্মেসি রয়েছে। সময়ের কারণে এটি খোলা হয় না। মাঝে মধ্যে খোলা হয়।

উপজেলার অলীপুর গ্রামের মোমেনা খাতুন (৬০) বলেন, আমি বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাই ওষুধ লিখে দেয়, ওষুধ কিনতে ফার্মেসি যাই। ১ হাজার টাকা দাম আসে, আমি গরিব মানুষ টাকা নাই তাই কিনতে পারি নাই।

হাসপাতালের আরএমপি ডা. আরিফুর রহমান বলেন, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ জন রুগী চিকিৎসাসেবা নেন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী ভর্তি হন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেবদাস বলেন, হাসপাতালে তেমন ওষুধ সংকট নেই। হাজার রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নেন। কিছু ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর ৭ তারিখের মধ্যে সেগুলো আসলে সংকট কেটে যাবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তারের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইলে গত ৩ দিন ধরে অসংখ্যবার কল দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।