এমপক্সের ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার

0
256

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত প্রাণীজাত (জুনোটিক) রোগ। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি বিজ্ঞানাগারে এক বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। এ রোগটির প্রাদুর্ভাব ১৯৭০ সাল থেকে প্রধাণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে দেখা যায়। ইতিপূর্বে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তবে এর নাম শুনে মনে হতে পারে বানরই এ রোগের জন্য দায়ী, যা সঠিক নয়। শুধু বানর থেকে নয় অন্যান্য প্রাণী থেকেও ছড়ায় এমপক্স।
এ রোগের জন্য দায়ী কোন প্রাণী?

ভাইরাসটি আসলে সংক্রমিত হয় ইঁদুর, বন্য কুকুর, কাঠবিড়ালি, বানর ও খরগোশের শরীর থেকে। ত্বকের ফোসকা সম্পূর্ণরূপে ভালো না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়ার এক থেকে চার দিন আগে থেকেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।

ছড়ায় কীভাবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমপক্স ভাইরাসটি একই সঙ্গে সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ। ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা হলো-

১. আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় তার শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
২. আক্রান্ত রোগীর ত্বকের সংস্পর্শে।
৩. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করলে।
৪. আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়া খাবার খেলে।
৫. আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে।
৬. এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।

আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে এ প্রথম সুইডেনে এমপক্স সংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়েছে।

জটিলতা-

সঠিক চিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কর্নিয়াল ইনফেকশন, অন্ধত্ব, সেপটিসেমিয়া, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।

প্রতিরোধ করার উপায়-

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যবহার করা কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র স্পর্শ করা যাবে না। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকুন। সংস্পর্শে এলে দ্রুত সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। প্রাণীর মাংস সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করে খেতে হবে। যদি রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এমপক্স রোগ ছড়ানোর প্রক্রিয়া জানা থাকলে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সহজেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। সংক্রমণ এড়াতে অবশ্যই কিছু বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এগুলো হলো-

১. বায়ু দূষণ ও বাতাসে এমপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত মাস্ক ও চশমা ব্যবহার করুন।

২. অপরিষ্কার হাতে মাস্ক, ত্বক ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।

৩. নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে সাবান, পানি অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

৪. এমপক্সে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিকে বাড়িতে আইসোলেট( পরিবারের অন্য সদস্য থেকে দূরে রাখতে আলাদা একটি ঘরে) রাখুন।

৫. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নিজে সুরক্ষিত থাকতে এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলেও তার থেকে অন্তত ৩ মাস শারীরিক দূরত্ব রাখা জরুরী।

৬. এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত এমন ব্যক্তির সঙ্গে দূর থেকে কথা বললেও বাতাসের মাধ্যমে আপনার আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এমপক্স রোগী থেকে দূরে রাখুন।

৭. এমপক্স রোগীর চিকিৎসকদের তাই পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। প্রয়োজনে সেফটি প্রটোকল মেনে চলতে হবে।

৮. রোগী আপন রোগ নয়, এ বার্তা আশপাশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিন। পাশাপাশি এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাড়িতে আইসোলেট রাখার পরামর্শ দিন। দ্রুত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে বলুন।

৯. আক্রান্ত ব্যক্তিসহ সবাই এমপক্স প্রতিরোধে যেখানে সেখানে থুথু, কফ ফেলা থেকে বিরত থাকুন। কাশি কিংবা হাঁচি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন। টিস্যু ব্যবহার করলে ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ব্যবহার করা টিস্যু ফেলুন।
১০. বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে তা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

দেখে নিন মৃত্যু হার-

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লেড ১বি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা বাকি। তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি সম্ভবত আগের ধরনের চেয়ে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, একইসঙ্গে আরও গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।

আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে ২০২৪ সালের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে আর এতে ৪৫০’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এই সংখ্যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২২ সালে এমপক্সের মৃদু ধরন ক্লেড ২’র কারণে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।

এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো যে দেশগুলোতে সাধারণত এই ভাইরাস দেখা যায় না এমন প্রায় ১০০টি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলিকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।