নাক দিয়ে রক্ত পড়ে কেন, সমাধান কী

0
64
নাকে রক্ত পড়া
ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন সময় নানা কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। তবে, সেটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নাক দিয়ে রক্তপাত কেন হচ্ছে অবশ্যই তার কারণ জানা জরুরি। কারণ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে রক্ত পড়ার আশঙ্কা অনেকাংশে থাকে না।

যেসব কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে

নাক শুষ্ক হয়ে যাওয়া

নাকে রক্তপাতের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে নাকের শুষ্কতা। রুম হিটার বা এসির কারণে নাকের ভেতর শুকিয়ে যেতে পারে। আবার শীতকালে বাতাসে আদ্রতা কম থাকার কারণেও নাক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুম, ধূলাবালুর পরিবেশের কারণেও একই অবস্থা হতে পারে। নাকের ঝিল্লি শুকিয়ে সেখানে শক্ত আবরণ পড়ে যায়। আঙুলের খোঁচা দিয়ে এই আবরণ তুলে ফেললে রক্ত ঝরতে পারে। নাককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রয়োজনে স্যালাইন নেজাল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

নাকে আঘাত

নাকে সামান্য আঘাতেও রক্ত ঝরতে পারে। নাক থেকে মারাত্মকভাবে কিংবা ফিনকি দিয়ে রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। অন্যথায় অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

ঠান্ডা ও ঋতুজনিত অ্যালার্জি

ঠান্ডা ও ঋতুজনিত অ্যালার্জি নাকে শ্লেষ্মা সৃষ্টি করতে পারে। জমে থাকা সর্দি বারবার বের করার ফলে নাকের রক্তবাহী নালী ছিঁড়ে যেতে পারে ও রক্ত ঝরতে পারে। নাকের সর্দি সরানোর জন্য নাকে বারবার হাত দেওয়া ঠিক নয়। শীতে সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে যদি প্রচুর হাঁচি হয়, সেক্ষেত্রেও নাকের রক্তজালিকাগুলোতে ছোট ছোট ফাটল ধরে রক্ত পড়তে থাকে। তবে এতে ভয়ের কিছু নেই।

বংশগত রোগ

বংশগত রোগ যেমন হিয়ারিডিটারি হেমোরেজিক টেলানজিয়েকট্যাসিয়ার (এইচএইচটি) কারণে নাকে ঘন ঘন রক্তপাত হতে পারে। নাক থেকে বারবার রক্ত ঝরলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ঘন ঘন রক্ত পড়ার কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। এর ফলে অল্প রক্তপাত একসময় বেশি রক্তপাত বা গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করে।

ওষুধের প্রতিক্রিয়া

কিছু কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে। রক্ত তরলীকরণ ওষুধ (যেমন- অ্যাস্পিরিন বা ওয়ারফারিন যা হৃদরোগ বা স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য সেবন করা হয়) সামান্য রক্তপাতকে গুরুতর করে তুলতে পারে। ওষুধ সেবনের আগে জেনে নিন নাকে রক্তপাতের আশংকা আছে কিনা।

নাকের বৃদ্ধি: নাকের অস্বাভাবিক বা অদ্ভুত বৃদ্ধি হতে পারে। এসবের মধ্যে পলিপ (মাংসপিণ্ড বা বেলুনের মতো ফোলা অংশ), নাকের টিস্যুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও টিউমার উল্লেখযোগ্য। নাকে টিউমার খুব একটা হয় না, হলে তা রক্তপাত ঘটাতে পারে। ঘন ঘন রক্তপাত নির্মূলে নাক বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন।

নাক থেকে রক্ত পড়ার ধরন

নাকে দুইরকম রক্তপাত হয়ে থাকে। কিছু রক্তপাত হয় নাকের সামনে থেকে এবং কিছু হয় পেছন থেকে। ট্রমা ও শুষ্ক নাকের রক্তপাত সাধারণত নাকের সামনে থেকে হয়। এ রক্তপাত দ্রুতগতিতে হয়ে থাকে। এটি প্রায় সময় গুরুতর হয় না যদি না রক্ত তরলীকরণ বা রক্ত জমাটে কোনো সমস্যা না হয়।

নাকের পেছনদিক থেকে রক্তপাত মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে অত্যধিক ফোলা হয় ও প্রচুর রক্তপাত হয়।

যা করবেন

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে সোজা হয়ে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে চেয়ারে বসে পড়ুন। বৃদ্ধাঙ্গুল ও শাহাদত আঙুল দিয়ে নাকের দুই ছিদ্র জোরে বন্ধ করুন। মুখ দিয়ে শ্বাস নিন। এভাবে ১০ মিনিট ধরে রাখুন। এ সময় আঙুল ছাড়বেন না, প্রয়োজন হলে আরও বেশিক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। এ সময় সম্ভব হলে কপালে, নাকের চারপাশে বরফ ধরে রাখুন। তাহলে রক্ত পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে। যদি রক্ত ১৫-২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পড়তে থাকে, তবে দেরি না করে পাশের হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে চলে যান। নাকে আঘাতজনিত রক্ত পড়া বন্ধ হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ নাকের হাড় ভেঙেছে কি না, তা দেখা জরুরি। বারবার রক্ত পড়লে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

সাবধানতা

রক্ত পড়াকালে শোবেন না। এতে রক্ত ফুসফুসে গিয়ে জটিল সমস্যা করতে পারে। রক্ত পড়া বন্ধ হলেও কয়েক ঘণ্টা নাক পরিষ্কার করবেন না, সামনে ঝুঁকে মাথা হৃৎপিণ্ডের নিচের লেভেলে আনবেন না। এতে আবার রক্ত পড়া শুরু হতে পারে।

এছাড়া নাক থেকে রক্ত পড়লে অনেকে পরামর্শ দেয় যে, মাথা পেছনে নিয়ে উপরদিকে মুখ করে থাকতে। কিন্তু এর ফলে রক্ত গিলে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যাও হতে পারে। সোজা হয়ে বসে থেকে আঙুল দিয়ে নাক চেপে ধরে রাখুন। সাধারণত এভাবে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।