বর্তমান বিশ্বে আমরা সবাই ব্যস্ত। কেবল ছুটছি আর ছুটছি। নিজেকে বানিয়ে ফেলছি আশেপাশের সবার প্রতিদ্বন্দ্বী। যেন সবকিছুতে জিততেই হবে! এই তাড়া আমাদের কতটা সফলতা এনে দেয় সেই হিসাব ভিন্ন, কিন্তু শরীর ও মনের বড় ক্ষতি করে দিতে পারে। আপনি কি জানেন এই সমস্ত চাপ আপনাকে প্রভাবিত করছে, বিশেষ করে আপনার শরীরের কর্টিসল নামক হরমোনের সঙ্গে।
আপনি কি সব সময় চাপ অনুভব করেন? আপনি কি ওজন হ্রাস, ঘুমহীন রাত, মেজাজের পরিবর্তন, চুল পাতলা হওয়া এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা অনুভব করছেন? তাহলে এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি। কিন্তু চিন্তা করবেন না, দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি স্বাভাবিকভাবে আপনার শরীরে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
কর্টিসল কী?
কর্টিসল হলো একটি স্টেরয়েড হরমোন যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উত্পাদিত হয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা, রক্তচাপ এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনি যদি ক্রমাগত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তবে এটি শরীরে উচ্চ কর্টিসল উৎপাদন করতে পারে, যা এর ভারসাম্যকে ব্যাহত করে। জেনে নিন কর্টিসল নিয়ন্ত্রণের ৪ উপায়-
১. ঘুম
ঘুম জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষজ্ঞের মতে, আপনি যদি প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা না ঘুমান তবে এটি শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বাড়াতে অবদান রাখতে পারে। তাই ঘুমের রুটিন রাখা খুব জরুরি। বিছানা থেকে গ্যাজেটগুলো দূরে রাখতে ভুলবেন না এবং ঘুমিয়ে পড়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে সেগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করুন। শরীর ভালোভাবে বিশ্রাম নিলে পরের দিন অলসতা বোধ করবেন না।
২. শারীরিক ব্যায়াম
ব্যায়াম শুধুমাত্র ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ। হালকা ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ- যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম এবং সাইকেল চালানোর মতো অভ্যাস শরীরে ফিল গুড হরমোন নিঃসরণ করে। এটি মেজাজ উন্নত রাখতে এবং কর্টিসলের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন এ ধরনের হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস থাকা জরুরি।
৩. সঠিক ডায়েট
সঠিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত খাবারের বাইরে ভাজা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যাফেইনকেও আপনার খাদ্য থেকে দূরে রাখুন কারণ এটি চাপ বাড়াতে পারে। করটিসলের মাত্রা মোকাবিলা করতে প্রতিদিন রঙিন শাকসবজি এবং পুষ্টিতে পূর্ণ সুষম খাবার খেতে ভুলবেন না। বাড়িতে তৈরি খাবার স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান। এটি কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
৪. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
প্রতিদিন ডিকম্প্রেস করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিশেষজ্ঞের মতে, কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস করুন। নিজের জন্য একটি ‘মি-টাইম’ নিশ্চিত করুন। সেই সময়টুকুতে নিজের পছন্দের কাজগুলো করবেন। এটি আপনার মেজাজ ভালো রাখতে এবং কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।