বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই আব্দুল কাদেরের। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাঁটু আর কোমরের ব্যথা। বছরের অন্য সময় চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলেও রমজানে যেন তার মন মানে না। মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে লম্বা সেজদাহ না দিলে মনে শান্তি মেলে না। কিন্তু মনমতো ফরজ আর নফল ইবাদতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জয়েন্টের ব্যথা। আব্দুল কাদেরের মনে একটাই কষ্ট। রমজানের মতো পবিত্র মাসেও কি প্রাণ ভরে স্রষ্টার ইবাদত করা সম্ভব হবে না?
গৃহিণী সালমা আক্তারের সমস্যা আবার ভিন্ন। রমজানে পরিবারের মানুষগুলোর জন্য হরেকরকম চপ, পাকোড়া, হালিম, শরবত বানান শখ করে। কিন্তু শেষের দিকে যেন হাত আর চলে না। কাঁধ আর ঘাড়ের জয়েন্টে শুরু হয় চিনচিনে ব্যথা। তার ওপর স্বামী আর সন্তানদের আবদারে একটু ভাজাপোড়া খেলেই শুরু হয় অশান্তি। বুক-গলা জ্বলা, পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণায় জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে।
বছরঘুরে আবার এসেছে মাহে রমজান। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আশায় এই মাসে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি রোজা রাখা, বেশি বেশি নফল ইবাদত করার চেষ্টায় মশগুল থাকেন।
রমজানে গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালা-পোড়া
রমজানে প্রথমত পরিবর্তন দেখা দেয় খাদ্যাভ্যাসে। সেহেরিতে খাবার খাওয়ার পর সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। ইফতারের মাধ্যমে রোজা সম্পন্ন করা হয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত মানুষরাও এই মাসটিতে ডায়েটে কিছুটা অনিয়ম করে ফেলেন। ইফতারের মাঝেমধ্যেই খেয়ে ফেলেন ভাজাপোড়া খাবার। অন্যদিকে সেহেরিতেও খাওয়া হয় ভুনা, ভাজি বা বেশি তেলে রান্না করা খাবার। এসবের প্রভাব পড়ে অন্ত্রে। বাড়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। রমজানে অন্ত্রের যত্নে করণীয় জানুন-
পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি
ঘুমের অভাব অন্ত্রের ক্ষতি করে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। যেহেতু সেহেরির সময় ঘুম ভেঙে উঠতে হয় তাই সন্ধ্যা রাতে কিছুটা আগে ঘুমিয়ে পড়ুন।
সারাদিন অভুক্ত থাকার পর একসঙ্গে অনেক খাবার খাবেন না। এতে অন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে। বরং অল্প কিছু খেয়ে নামাজ আদায় করে ধীরে ধীরে চিবিয়ে বাকি খাবার খান। এই অভ্যাসে ওজন আর ডায়াবেটিস দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
রমজানে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ২০২২ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী পর্যন্ত পানি পেটের ভেতর গ্যাস্ট্রিকজনিত ইনফেকশন বৃদ্ধিকারক ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমায়। তাই ইফতারে পানি ও তরলজাতীয় খাবার বেশি রাখুন।
প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন
শতচেষ্টার পরও রমজানে সব নিয়ম মানা সম্ভব হয় না। দাওয়াত, ইফতার পার্টি, বন্ধুদের আড্ডায় ভুলভাল খাবার খেয়ে ফেলতেই হয়। এজন্য প্রিবায়োটিক বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। এগুলো আপনার অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়াবে। কিংবা ভরসা রাখুন কারকুমা হেলদি গাটে। এটি এমন একটি ফাংশনাল ফুড পণ্য যা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় সহায়তা করে এবং পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে। বুক জ্বালাপোড়া, অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা সব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেডের এই ফাংশনাল ফুড পণ্যটি।
রমজানে জয়েন্ট ব্যথা
রমজান মাসে ইবাদতের পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় জয়েন্টের ব্যথা। ফরজ নামাজের পাশাপাশি এসময় তারাবিরসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করতে গিয়ে কিছুটা অসুবিধায় পড়েন গাঁটের বা জয়েন্টের ব্যথায় ভোগা ব্যক্তিরা। রমজানে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণের উপায় জানুন-
গরম বা ঠান্ডা সেঁক
গাঁটের ব্যথা কমাতে গরম পানি বা বরফের সেঁক দিতে পারে। দিনে ২/৩ বার এই সেঁক ব্যথা কমাতে পারে। পাশাপাশি উষ্ণ পানির বাথটাবে কিছুক্ষণ থাকলেও উপকার মিলবে। বাথটাব না থাকলে বড় বালতি বা বোলে হালকা গরম পানি দিয়ে সেঁক দিন।
জেল বা তেল
বাজারে এমন কিছু জেল বা তেল পাওয়া যায় যা জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এমন কোনো জেল, তেল বা মলম ব্যবহার করতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ইফতার ও সেহেরিতে বেশি করে ভিটামিন ডি’যুক্ত খাবার রাখুন। হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে এসব খাবার। আদা, হলুদ, রসুন, গোলমরিচ ইত্যাদি গাঁটের ব্যথা উপশমে সহায়ক। এছাড়া খেতে পারেন মাছের তেল, হাড়ের ঝোল ইত্যাদি।
ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস
জয়েন্টের ব্যথা সামলাতে খেতে পারেন কারকুমা জয়েন্ট গার্ডের মতো ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস। এটি এমন একটি ফাংশনাল ফুড যা দেহের জয়েন্টগুলোকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ফলে জয়েন্টে ব্যথা, জয়েন্টের চাপ বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে প্রাকৃতিক ভাবে স্বস্তি পেতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি জয়েন্টের গতিশীলতা ও নমনীয়তা বাড়ায়। জয়েন্টের প্রদাহ হ্রাস করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও অর্গানিক ফাংশনাল ফুড গ্রহণের পরও যদি শারীরিক জটিলতায় ভোগেন তবে শরীরের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিশ্রম করবেন না। এতে হিতের বিপরীত হবে। সুস্থ দেহে এই রমজানে ইবাদত করুন প্রাণভরে।