সাধারণত মেরুদণ্ডের বেশিরভাগ রোগের ক্ষেত্রেই ব্যথা থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝিমঝিম করা, হাত বা পায়ের দুর্বলতাও থাকতে পারে। মেরুদণ্ডের সমস্যার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যা ঘাড়ে হলেও ব্যথা হাত পর্যন্ত চলে যায় এবং সমস্যা কোমরে হলে ব্যথা পা পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
গবেষণা বলছে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগে থাকেন। যেকোনো সমস্যা যা মেরুদণ্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত, বিশেষ করে ঘাড়ে, পিঠে বা কোমরের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাকে মেরুদণ্ডের সমস্যা বলা হয়ে থাকে।
মেরুদণ্ডের ভয়াবহ ব্যথার জন্য সহজ সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট ও মেরুদণ্ড ও জয়েন্ট পেইন স্পেশালিস্ট ডা: বিজয় দাস।
তিনি বলেন, মেরুদণ্ডের বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণতো অর্থোপেডিক, মেডিসিন ও নিওরোমেডিসিন চিকিৎসক সমস্যা নির্ণয় করে উপযুক্ত ওষুধ প্রদান করেন। মেরুদণ্ডের সমস্যা যদি কোনো প্যাথলজিক্যাল কারণে হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মেডিসিন চিকিৎসা প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে।
তাছাড়া গবেষণা বলছে, শতকরা প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি মেরুদণ্ডের সমস্যা মেকানিক্যাল কারণে হয়ে থাকে। মেকানিক্যাল সমস্যার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের সমস্যার অন্যতম প্রচলিত চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। বাংলাদেশেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যাবস্থা প্রচলিত আছে। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক প্রথমে রোগীর সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে, রোগ নির্ণয় করে এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
সধারণত যেসব ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সেসব বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহই রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করেন। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির কথা জানালেন ডা: বিজয় দাস বললেন।
ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি: একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তার দক্ষ হাতে রোগীর মেরুদণ্ডের বিভিন্ন গঠন উপাদান যেমন ডিস্ক, ছোট জয়েন্ট, লিগাম্যান্ট, মাংশপেশীর বিভিন্ন সমস্যা সংশোধন করতে বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।
প্রতিটি চিকিৎসা পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত। এদের ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি হলো- ম্যাক্যাঞ্জি কনসেপ্ট, মেইটল্যান্ট কনসেপ্ট, সিরিয়াক্স কনসেপ্ট, ম্যালীগান টেকনিক, মাল্টিমডেল ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি টেকনিক।
২০১৯ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মেরুদণ্ডের সমস্যা যদি মেকানিক্যাল কারণে হয়ে থাকে তবে ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি কোমর, ঘাড় ও পিঠের ব্যথার চিকিৎসায় অনেক বেশি কার্যকরী ফলাফল দিতে পারে।
ইলেক্ট্রোথেরাপি: ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা উপকরণ হিসেবে বেশ কিছু বৈদ্যুতিক মেশিন বা ডিভাইস বেশ প্রচলিত আছে। এদের ইলেক্ট্রোথেরাপি বলে। বাংলাদেশে ইলেক্ট্রোথেরাপি মেশিনের মধ্যে ইউএসটি, এসডব্লিউডি, এমডব্লিউডি, ট্রাকশন, লেজার, আইএফটি, টিইএনএস, আইআরআর বহুল প্রচলিত।
তবে কোনো কোনো সমস্যায় ইলেক্ট্রোথেরাপি প্রয়োগ করতে হবে এবং তার মাত্রা বা ডোজ কি হবে তা শুধু একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকই নির্ধারণ করেন।
ইলেক্ট্রোথেরাপি ব্যথা কমাতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে, টিস্যু ঠিক করতে, মাংশপেশী শক্তিশালি করতে ভূমিকা রাখে। যদিও অনেকেই ইলেক্ট্রোথেরাপিকে চিকিৎসা সহায়ক উপকরণ মনে করেন, তবে কিছু কিছু ইলেক্ট্রোথেরাপি মেশিনের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা বৈজ্ঞানীক গবেষণায় সমর্থিত নয়।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ইলেক্ট্রোথেরাপির ব্যবহার ম্যানিপুলেটিভ থেরাপির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে করলে কোমর, ঘাড় ও পিঠের ব্যথার রোগীকে অনেক দ্রুত আরোগ্য প্রদান করা যায়।
তবে ভুল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হতে সাবধান করলেন তিনি। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জনপ্রিয়তার কারণে কিছু অসাধু লোক ফিজিওথেরাপির নামে অপচিকিৎসা চালাচ্ছে। মূলত ব্যবসায়িক ভাবে লাভবান হওয়াই এদের মূল উদ্দেশ্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।