হঠাৎ করে যদি আমাদের মুখের একদিকে কানের পাশে বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা হয়, আবার একটু পরে চলেও যায়, তা হলে আমরা সাধারণত তাকে ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া বলি। এটি বেদনাদায়ক নার্ভকে প্রভাবিত করে এমন ব্যথা অবস্থার দীর্ঘ স্থায়ী রূপ। ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া সাধারণত পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি। সাধারণত যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হলো—
-মুখের একদিকে কানের পাশে ব্যথা
-ব্যথা দুই মিনিটের কম থাকবে
-সেভ করার সময়, ব্রাশ করার সময় অথবা মুখে হাত দিলে ব্যথা লাগতে পারে
কেন হয়?
আমাদের মস্তিষ্কের নিচের অংশে শিরা বাধমনী থাকে, যদি কোনো কারণে সেসব শিরা বাধমনীর সঙ্গে লেগে ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু চাপ খায়, তা হলে ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া রোগটি হতে পারে। তা ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন—
-বার্ধক্যজনিত কারণে
-মাল্টিপল স্কেলেরোসিস
-ব্রেইনে টিউমার হলে
-যে কোনো প্রকারের মস্তিষ্কে ক্ষতের কারণে
-মাথায় আঘাত পাওয়াসহ আরও বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
যে কোনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা রোগীকে প্রশ্ন করি ব্যথার ধরন কেমন, কোন জায়গায় ব্যথা হয়, ব্যথা কতক্ষণ থাকে এবং কোন সময় আপনার ব্যথা বেড়ে যায় ইত্যাদি। রোগের কারণ বের করার জন্য আমরা রোগীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকি। যেমন— এমআরআই, ইএমজি, এনসিএস ইত্যাদি।
চিকিৎসা
একজন নিউরোসার্জন অথবা নিউরোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে থেকে এ রোগের চিকিৎসা করতে হয়। আমরা সাধারণত ব্যথার ওষুধ, রিহ্যাবিলিটেশন, ইন্টারভেনশন যেমন, ট্রাইজেমিনাল নার্ভ ব্লক, লোকাল অ্যানেসথেটিক নার্ভ ব্লক, নিউরোলাইটিক ব্লক অথবা আকুপাংচার করে থাকি।
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া অত্যন্ত কষ্টকর একটি অসুখ, যা মানুষের সাধারণ জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলে। তাই যদি আপনার মাঝে এই রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায় তা হলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন নিউরোসার্জন অথবা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: ডা. মো. গওছুল আযম