আর্থ্রাইটিস শব্দটির সঙ্গে সবাই কম বেশি পরিচিত। এ ধরনের রোগের কারণ ও করণীয় সম্পর্কে তেমন কোনো কিছু জানি না। আর্থ্রাইটিস হচ্ছে হাড় অথবা হাড়ের জোড়ার প্রদাহ। বাংলায় এটিকে বাত বলা হয়। এই অবক্ষয়জনিত রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পরিবর্তন আনতে হবে জীবনযাত্রায়।
মূলত আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিসের সমস্যাও জিনগত। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে এই সমস্যা মূলত দেখা যেত। এখন অল্পবয়সীরাও ভুগছে আর্থ্রাইটিসে। সেই সঙ্গে শিশুরাও আজকাল আক্রান্ত আর্থ্রাইটিসে।
২০১৯ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ১৯৯০ দশকে ভারতে প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ অস্টিওআর্থারাইটিসে ভুগছিলেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটিতে। যদিও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওআর্থারাইটিসে ঐক্রান্তের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
হাঁটু, কোমর, পায়ের ব্যথায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা-ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে এই অসুখ আপনি দীর্ঘদিন চিকিৎসা করলেই যে সেরে যায় এমন নয়। অন্যদিকে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে আর্থ্রাইটিস থেকে হতে পারে কিডনির সমস্যা। তাই চলুন জেনে নিই কীভাবে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা থেকে সহজে মুক্তি মেলে-
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর জয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত চাপ দেয়। এ কারণে চেষ্টা করুন নিজের জন্য সঠিক ওজন বহন করার। এ জন্য আপনাকে সঠিক ডায়েট ফলো করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়ামে করতে হবে। এটি করে আপনি সহজেই হাঁটু ব্যথা কমাতে পারবেন।
কম প্রভাবযুক্ত ব্যায়ামে করুন
হাঁটুতে ব্যথা হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনি ব্যায়াম করতে পারবেন না। আপনার রুটিনে সাঁতার, সাইকেল চালানো বা হাঁটার মতো কম প্রভাবিত ব্যায়ামগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করুন, যা জয়েন্টের নমনীয়তা উন্নত করতে এবং হাঁটু সমর্থনকারী পেশীগুলোকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন উচ্চ প্রভাবমূলক ক্রিয়াকলাপগুলো এড়িয়ে চলুন।
গরম এবং ঠান্ডা থেরাপি
আক্রান্ত হাঁটুতে তাপ বা ঠান্ডা প্যাক লাগালে ব্যথা এবং প্রদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গরম প্যাকগুলো পেশী শিথিল করতে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে, যখন ঠান্ডা প্যাকগুলো জায়গাটি অসাড় করে দিতে পারে এবং ফোলা কমাতে পারে।
সহায়ক ডিভাইস ব্যবহার
সহায়ক ডিভাইস, যেমন হাঁটু বন্ধনী বা বেত, স্থায়িত্ব প্রদান করতে পারে এবং হাঁটু জয়েন্টে চাপ কমাতে পারে। আপনার নির্দিষ্ট অবস্থার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সহায়ক ডিভাইসগুলো নির্ধারণ করতে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় প্রোটিন প্রয়োজনের তুলনায় কম খেতেই বলা হয়। তবুও প্রতিদিনের ডায়েটে টকদই, ডিম, ফল, প্রোটিন স্মুদি এসব অবশ্যই রাখার চেষ্টা করুন। নিয়ম করে প্রোটিন খেলে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। ব্যথা থাকবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
আপনি চাইলে আপনার খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবার যোগ করে বাতের ব্যথা কমাতে পারেন। আপনার প্লেটে সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি বাদাম এবং বীজ রয়েছে তা নিশ্চিত করুন। হাইড্রেটেড থাকার পাশাপাশি ভিটামিন, খনিজ, প্রোবায়োটিক, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন।
বাদাম খান
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন শুকনো ফল, আমন্ড খেলেও বাতের ব্যথা কমে। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাল উৎস হল আমন্ড। আর তাই বাতের ব্যথা থাকলে রোজ নিয়ম করে আমন্ড খেতেই হবে।
রঙিন ফল খান
বাতের ব্যথার খুব ভাল কাজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। জার্নাল অব ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করে। নিয়ম করে বিভিন্ন লেবু, ন্যাশপাতি, মুসাম্বি, পিচ জাতীয় ফল রাখুন রোজকারের ডায়েটে।
প্রয়োজনীয় ফ্যাট খান
যে সব ফ্যাট শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর তার মধ্যে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়ার ফলে শরীরের ফোলা ভাব এবং জয়েন্টের ব্যথা কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে গ্লুটেন ফ্রি টোস্ট, অ্যাভোগাডো, ডিম, আখরোট এসব খান নিয়ম মেনে।
ব্রেকফাস্টে সবজি খান
ব্রেকফাস্টে রাখুন বিভিন্ন রকমের সবজি। গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম এসব বেশি করে খান। ওটসের তৈরি রুটির সঙ্গে গাজর, কুঁদরি এসব খেতে পারলে খুবই ভাল। এতে ব্লাডপ্রেশার যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকে তেমনই ব্যথা, জ্বালাভাব থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।