জন্মগত জিনগত জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে ভালো হয়। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
থ্যালাসেমিয়া রোগটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না অনেকেই। এমনকি এ রোগের লক্ষণ সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। যে কারণে বেশিরভাগ রোগীই থ্যালাসেমিয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও এর লক্ষণ না জানার কারণে সঠিত সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এই রোগের জিনবাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এ জিনবাহকের মাধ্যমেই একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায় রোগটি। ভাবছেন কীভাবে?
বিয়ের মাধ্যমে এ রোগটি বিস্তার লাভ করে। যেমন ধরুন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন অথবা উভয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে জিনগত কারণে সে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এজন্য চিকিৎসকরা বলছেন, বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েরা তাদের বিয়ের আগে এই রোগের জিনবাহক কি না তা জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, নারী-পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে থ্যালাসেমিয়া রোগটি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেই তারা বিপত্তিতে পড়েন।
থ্যালাসেমিয়া একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি থাকে। যে কারণে থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগে ভোগেন।
এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার বয়স ২০ দিন কমে যায়। সাধারণ শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা ১২০ দিন টিকে থাকে। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া রোগে ১০০ দিনেই লোহিত রক্ত কণিকার আয়ু শেষ হয়। যে কারণে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর হিমোগ্লোবিন কম মানেই শরীরে রক্ত কমে যাওয়া।
শরীরে রক্ত কম থাকার কারণে অক্রিজেন লেভেল কমতে শুরু করে। অল্পতেই রোগী ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। পেট ফুলে যাওয়া, ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, মুখের হাড়ের পরিবর্তনও হতে দেখা যায় থ্যালাসেমিয়া রোগীর। তাই এসব লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সুস্থ রাখতে প্রাথমিক চিকিৎসা হলো নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্ত দেয়া। কিন্তু এভাবে দীর্ঘমেয়াদী কোনো ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। এরজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনিম আহমেদ বলছেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীর উন্নত চিকিৎসা হলো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন।
আর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে করতে হবে। এ চিকিৎসার ভালো ফলাফল তখনই মিলবে যদি শিশুর শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাহলেই রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।