যদিও প্রেম দীর্ঘকাল ধরেই দার্শনিক এবং কবিদের জন্য একটি একচেটিয়া চিন্তার বিষয়। তবে এই ভালোবাসার বিষয়টি ভাবিয়েছে বিজ্ঞানীদেরও। বিজ্ঞান বলছে, প্রেম বা ভালোবাসার একটি প্রকৃত বিজ্ঞান রয়েছে।
প্রেমে পড়া মস্তিষ্কের জৈব রসায়নে বিশাল; কিন্তু পরিমাপযোগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞান প্রেমের তিনটি মৌলিক অংশ চিহ্নিত করেছে। প্রতিটি মস্তিষ্কের রাসায়নিকের একটি অনন্য মিশ্রণ দ্বারা চালিত।
প্রেমে পড়া পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আকর্ষণ অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিন দ্বারা চালিত হয়। এই রাসায়নিকগুলো মস্তিষ্কে উত্তেজনাপূর্ণ ও অভিনব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রকাশিত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি সংযুক্তি হরমোন ও মস্তিষ্কের রাসায়নিকের একটি ভিন্ন সেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মস্তিষ্কের অক্সিটোসিন এবং ভাসোপ্রেসিন বন্ধনকে উৎসাহিত করে।
মজার বিষয় হলো, অক্সিটোসিনকে কাডল হরমোন বলা হয়। আর এই হরমোনই মা ও শিশুর মধ্যে বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে। এই প্রতিটি রাসায়নিক কাম, আকর্ষণ এবং সংযুক্তি প্রভাবিত করতে মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে কাজ করে।
বিজ্ঞান আরও দেখিয়েছে, প্রেমে পড়ার প্রক্রিয়াটি কিছু ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চোখ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা ৩০ মিনিটের জন্য একজন নিখুঁত অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে গভীরভাবে কথা বলেছিল এবং তারপর চার মিনিটের জন্য একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়েছিল, তারা গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী সংযুক্তি অনুভব করেছিল। এমনকি এক জুটি বিয়ে পর্যন্ত করতে গিয়েছিল!
বিজ্ঞানীরা আরও যে বিষয়টি লক্ষ করেন তা হলো, যারা প্রেমে পড়ে না, তাদের থেকে প্রেমে পড়া ব্যক্তির মাথার গঠন ভিন্ন হয়ে থাকে। এই গঠনের তারতম্যের জন্যই কোনো ব্যক্তি কখনোই প্রেমে পড়েন না আবার কোনো ব্যক্তি একেবারে হাবুডুবু খেতে থাকেন প্রেমে।
অনেকেই নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিতে দ্বিধাবোধ করেন না এই মস্তিষ্কে নিঃসরিত হরমোন প্রভাবের দ্বারা। আবার কাউকে দেখা যায় বারবার প্রেমে পড়তে। এটিও হরমোনের প্রভাব বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
যদিও প্রেমের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তবে মস্তিষ্ককেও এখন থেকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেননা, আপনার পছন্দের রাইট পারসনটি জীবনের শেষ পর্যন্ত আপনার সঙ্গে পথ চলবে কি না, তা শুধু মস্তিষ্কের হরমোনই বলতে পারবে। আর এই হরমোনের প্রভাবেই আপনার হৃদয় প্রতিনিয়ত জানান দেবে তার অস্তিত্ব।