দেশে দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা, রূপ নিচ্ছে নতুন এক মহামারিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এমনকি আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় ধূমপান, তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্ষতিকর ফাস্ট ফুডের লোভনীয় বিজ্ঞাপন বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে বলাই যায় যে, শিগগিরই রোগটি মহামারি আকারে রূপ নিচ্ছে। বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিসের যেই সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত আছে, আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। সে হিসেবে দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
বক্তারা বলেন, ধূমপানে আসক্তদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী যদি তামাক ব্যবহার করে তার ঝুঁকি পাঁচগুণ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে যারা তরুণ বয়সে ধূমপান করে তারা পরবর্তীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়া তামাক জাতীয় সামগ্রী ও ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জর্দা, গুল এসব থেকে দূরে থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ডা. একে আজাদ খান বলেন, ফাস্ট ফুড ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ফাস্ট ফুডের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত না। উন্নত দেশে স্কুল-কলেজের আশেপাশে বা বিজ্ঞাপনে ফাস্ট ফুডের বিজ্ঞাপন দেওয়া নিষেধ। সেখানে বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব জায়গায় ফাস্ট ফুড থাকে। এছাড়া প্রত্যেকটি খাবারের গায়ে উপাদান সম্পর্কে লেখা থাকতে হবে। এতে মানুষ সচেতন থাকবে তার জন্য কোনটা ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, গ্রামের চেয়ে শহরে ডায়াবেটিস রোগী বেশি। কিন্তু প্রি-ডায়াবেটিস গ্রামে বেশি। তাদেরকে যদি শহরে আনা হয় আর আরামে থাকে তাহলেই তাদের ডায়াবেটিস হবে। ৪০ বছর বয়স থেকে ডায়াবেটিস চেকআপ করা উচিত। আর যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের ৩০ বছর থেকে চেকআপ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ডায়াবেটিসপ্রবণ দেশ এবং বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়েও গুরুতর। বর্তমানে শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিসের রোগী। তাই গুরুতর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এখনই এটি প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, নগরায়ণের ফলে হাঁটার সুযোগ কমে গেছে, খেলার জায়গা নেই। তাই ফুটপাতগুলোকে অন্তত সুন্দর করতে হবে। যাতে সেখানে হলেও মানুষ চলাচল করতে পারে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বারডেম হাসপাতালের পরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, সোসাইটির সভাপতি (নির্বাচিত) ও ইউনাইটেড হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি ও বারডেম হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানাসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’।