কেন তরুণরা হার্ট অ্যাটাক করে, নারায়ণ মূর্তির বিতর্কিত বার্তা!

0
131

ভারতের প্রধান তথ্যপ্রযু্ক্তি সংস্থা ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি। তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শ্বশুর। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তরুণদের কর্মঘন্টা নিয়ে তার বার্তা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার কথায় তরুণদের হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টিও উঠে এসেছে।

এক অনুষ্ঠানে নারায়ণ মূর্তি খোলামেলাভাবে বলেছেন, দেশের নতুন প্রজন্মের উচিত সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকা। তবেই দেশে কর্মসংস্কৃতির পরিবেশের উন্নতি ঘটবে এবং বিশ্ব-মঞ্চে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে ভারত।

তিনি আরও বলেছেন, ‘দেশের নতুন প্রজন্মের প্রত্যয় হওয়া উচিত এটা আমাদের দেশ, আমরা সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই জার্মান ও জাপানিরা করেছিলেন।’

তার স্পষ্ট বক্তব্য, নতুন প্রজন্ম যদি আরও বেশি সময় কাজ না করে তাহলে তথাকথিত উন্নত দেশগুলোকে ভারত ছুঁতেই পারবে না। কারণ তারা পরিশ্রম করেই উন্নতি করেছে।

তবে তার ৭০ ঘন্টা কাজ করার পরামর্শ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করেছে। কথাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিতর্কের জন্ম দেয়।

নারায়ণ মূর্তির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গোল্ড মেডেলিস্ট খ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ দীপক কৃষ্ণমূর্তি সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ করার দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত প্রভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

জেএসডাব্লিউ এর চেয়ারম্যান সাজ্জান জিন্দাল সহ অনেকে নারায়ণ মূর্তির এই কর্মঘন্টাকে সমর্থন করেন। এরপর বিলিয়নিয়ারদের নিন্দার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

একজন বলেছেন, প্রস্তাবিত কাজের এই সময়সূচী খুবই অমানবিক।

ডা. দীপক কৃষ্ণমূর্তি আরও বলেছেন, এটি অমানবিক কর্মঘণ্টা যা পুরো প্রজন্মকে হার্টের সমস্যা তৈরি করবে। দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রকাশ করেছেন।

ডা. দীপক তার এক্স হ্যান্ডেলে (আগের টুইটার) লিখেছেন, ‘প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা (যতদূর আমি জানি) আপনি যদি সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করেন – প্রতিদিন ১২ ঘন্টা বাকী ১২ ঘন্টা ৮ ঘন্টা ঘুম ৪ ঘন্টা থাকে বেঙ্গালুরুর মতো একটি শহরে ২ ঘন্টা রাস্তায়, ২ ঘন্টা থাকে – ব্রাশ, মলত্যাগ, গোসল , খাওয়া। সামাজিকতার জন্য সময় নেই, পরিবারের সাথে কথা বলার সময় নেই, ব্যায়াম করার সময় নেই, বিনোদনের জন্য সময় নেই। তারপর আবার কোম্পানীগুলো কাজের সময়ের পরেও ইমেল এবং অফিসের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকারও আশা করেন। তাহলে বুঝুন অল্পবয়সীরা কেন হার্ট অ্যাটাক করছে?

দীপক সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কর্মক্ষেত্র বাড়াতে। যাতে বেকারত্ব রোধ করা যায় এবং যুবকরা যেন কর্ম-জীবনটাকে উপভোগ করতে পারে।

ডা. কৃষ্ণমূর্তি-এর পোস্টে অসংখ্য ব্যবহারকারীর লাইক ও কমেন্ট ভরে গেছে। কেউ কেউ আবার দ্বিমতও পোষণ করেন।

একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, ‘এই কর্মঘণ্টা কার্ডিয়াক সমস্যা তৈরি করবে, স্ট্রেস সম্পর্কিত জটিলতাও বাড়বে, মানসিক সমস্যাতো রয়েছেই , বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক সমস্যা, উদ্বেগ এবং আরও অনেক কিছুর দিকেই পরিচালিত করবে।’

উল্লেখ্য, নারায়ণ মূর্তি একজন ভারতীয় বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী। তিনি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সেখান থেকে অবসর নেয়ার আগে এবং ইমেরিটাস চেয়ারম্যান পদ গ্রহণের আগে কোম্পানির চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন। ফোর্বস এর মতে তিনি ২০২২ সালে পৃথিবীর ৬৫৪তম ধনী ব্যক্তি ছিলেন।