চুল যেন সৌন্দর্যের কবিতা

0
400

নারীর সৌন্দর্যের একটি রহস্য হচ্ছে চুল। আপনি নিজেকে কীভাবে সাজাবেন তা অনেকটাই নির্ভর করে চুলের ওপর। তাই হালকা সাজ হোক কিংবা ভারি চুলের সাজের বেলায় ছাড় দেয়া অসম্ভব। আর তাই চুলের যত্নও আবশ্যক।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাবার যেমন আমাদের শক্তি জোগায় তেমনি চুলেরও খাবার প্রয়োজন তার শক্তি জোগাতে। সঠিক পুষ্টির অভাব চুল যেমন রুক্ষ করে দিতে পারে তেমনি চুলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চুল পড়া, আগা ফাটা, খুশকি জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যে কারণে চুল রুক্ষ

ঘরোয়া যত্নে আপনার চুল ফিরে পেতে পারে প্রাণ আর আপনি যে কোনো সাজের সঙ্গে চুলের স্টাইল আপনার মনের মতো করে বেছে নিতে পারেন। অন্যদিকে চুলের রুক্ষতার পেছনে কারণ হতে পারেন আপনার প্রতিদিনের রুটিনে থাকা কাজ। কাজের খাতিরে অনেকেই দিনের লম্বা একটা সময় কর্মস্থলে দিয়ে থাকে। আর এতে করে চুল খুব সহজেই বাইরে ধুলাবালির সংস্পর্শে চলে আসে। যার কারণে চুলের রুক্ষতা দিন দিন বেড়ে গিয়ে চুলের আগা ফাটা কিংবা খুশকির মতো সমস্যায় রূপ নেয়। তাই বাইরে যতটা সম্ভব চুল খোলা না রাখাই ভালো।

শ্যাম্পু ও তেলের ব্যবহার

এছাড়া সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু করা উচিত। এতে চুল ভালো থাকে। শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় না পৌঁছায়। চুলের বাইরের অংশে কন্ডিশনার দিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে নিন এবং টাওয়েল দিয়ে হালকা করে মুছে নিন। ভেজা চুল কখনোই আঁচড়াবেন না। এতে করে চুলের ক্ষতি হতে পারে। ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না। চুল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে বেঁধে নিতে পারেন। চুল বাঁধার ক্ষেত্রে রাতের বেলা ঘুমানোর সময় চুল না বাঁধাই ভালো। এতে করে চুল ভেঙে যেতে পারে। এছাড়া সপ্তাহে তিনদিন গোসলের আগে হালকা গরম তেল চুলে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। যাদের চুল পড়ার সমস্যা আছে তারা নারিকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টার ওয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে।

অন্যদিকে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্নের ক্ষেত্রে মেথি, মেহেদি, ডিমের সাদা অংশ, পিঁয়াজের রস চুলে দিতে পারেন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুলে সিল্কি ভাব আসবে। এসব কিছুর পাশাপাশি প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করুন সবুজ শাক-সবজি রাখুন খাবার তালিকাতে। এতে করে আপনি যেমন থাকবেন সুস্থ তেমনি আপনার চুলও থাকবে প্রাণবন্ত।

চুলের যত্নে রুটিন

সকাল থেকে রাত অবধি রুটিন মাফিক চুলের যত্ন নিন। তবে এর জন্য আপনাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হবে না।মাত্র ৫টি বিষয় মেনে চলুন তাহলেই হবে।

১.ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়ে নিন

সকালে ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়ানো খুব জরুরি।আমরা যতই চুল বেঁধে ঘুমোই না কেন,ঘুম থেকে ওঠার পর তাতে অল্প বিস্তর জট হয়েই যায়।তাই সকালে উঠে চুল খুলে ভালো করে চুল আঁচড়ে নিন।এতে রাত ভর আপনার চুলের গোড়ায় যে প্রাকৃতিক তেল নির্গত হয় তা আপনার চুলে ছড়িয়ে যায়,যা আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।অন্তত ৫-১০ মিনিট নিজের চুল কে প্যাম্পার করুন।

২.চুল ধুয়ে নিন

চুল নিয়মিত ভালো করে না ধুলে কিন্তু খুব বিপদ।চুলের ধরণ অনুযায়ী তা আলাদা হওয়া প্রয়োজন।যাদের নর্মাল চুল তারা একদিন পরপর চুল ধুতে পারেন।যাদের তৈলাক্ত চুল তারা প্রতিদিন চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন।যাদের রুক্ষ চুল তারা দু’দিন পরে একবার করে চুল ধুলে ভালো।রুক্ষ চুল যাদের তাদের চুলকে নমনীয় করে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।আবার যাদের তেলতেলে চুল তাদের অয়েল ক্লিয়ার শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।আর নর্মাল চুল হলে যে কোনো ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।শ্যাম্পু ভালো করে মাথায় সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করা উচিত।এছাড়া মাথার খুলি পরিস্কার রাখতে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

.ভেজা চুলের যত্ন

গোসল করার পর নরম তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিতে হবে।তবে চেপে চেপে মুছতে হবে।কখনই তোয়ালে দিয়ে চুল জোরে জোরে ঘষে মোছা উচিত নয়।ভেজা চুল নরম থাকে,তাই ঘষলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এক্ষেত্রে চুলে তোয়ালে পেচিয়ে রাখুন।এতে আপনার মাথার অতিরিক্ত জল তোয়ালে শুষে নেবে।একটু শুকিয়ে গেলে তবেই চুল আঁচড়ে নেবেন।

৪.হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারে সতর্কতা

প্রতিদিন কাজে বেরোনোর সময় বা বাড়িতে থাকলে চুল বাঁধাটা কিন্তু একটা বড় কাজ।কখনই ভেজা চুল বাধা উচিত নয়।খুব বেশি তাড়া থাকলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন,কিন্তু অকারণে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করাই ভালো।এতে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কোনো অনুষ্ঠান থাকলে হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেই পারেন,কিন্তু এগুলি নিয়মিত ব্যবহার করা একেবারেই ভালো নয়।

৫.রাতে চুলের যত্ন নিন

রাতে কিন্তু চুলের যত্ন নেওয়া খুব প্রয়োজন।একদিন বা দু’দিন পরপর একবার করে রাতে ভালো করে মাথায় অয়েল ম্যাসাজ করা খুব জরুরি।এতে চুল পুষ্টি পায় এবং চুল মজবুত হয়।তেল মাখুন বা না মাখুন,রাতে কিন্তু আরেকবার ৫-১০ মিনিট ধরে চুল আঁচড়ে নিয়ে চুল বেঁধে শুলে চুল ভালো থাকে।

যেকোন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদে শুভফল বয়ে আনে। রুটিন মেনে চললে চুলের যেকোন সমস্যার সমাধান ঘরে বসেই করতে পারবেন।