ভারতের পশ্চিম উপদ্বীপ অঞ্চলের রাজ্য মহারাষ্ট্রের সরকারি এক হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টায় ১৬ নবজাতক সহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে সাপের কামড়ে।
মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। স্থানীয় সময় সোমবার ও মঙ্গলবার দেশটির মহারাষ্ট্রের নান্দেদ জেলার সরকারি শঙ্কররাও চভন হাসপাতালে এই মৃত্যুগুলো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার মহারাষ্ট্রের নান্দেদের ওই সরকারি হাসপাতালে ১২ নবজাতক এবং ১২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মারা যান। তবে একদিনে এতো সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য ওষুধ এবং হাসপাতালের কর্মী সংকটকে দায়ী করেছেন সরকারি শঙ্কররাও চভন হাসপাতালের ডিন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় ছেলে শিশু ও ছয় মেয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে ১২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও বিভিন্ন রোগের কারণে মারা গেছেন। তবে বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে সাপের কামড়ে। হাসপাতাল কর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করার কারণে আমরা অসুবিধায় পড়ে গেছি।’
এদিকে সোমবারের পরও মঙ্গলবার একই হাসপাতালে আরও সাত রোগীর মৃত্যু হয়। যার মধ্যে চারজনই শিশু।
হাসপাতালের ডিন বলেন, আমদের হাসপাতালটি ছোট হলেও দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এখানে আসেন। কোনও কোনও দিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং আমাদের বাজেটের সমস্যায় পড়তে হয়। এটি হাফকাইন ইনস্টিটিউট। আমাদের তাদের কাছ থেকে ওষুধ কেনার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আমরা স্থানীয়ভাবে ওষুধ কিনে রোগীদের দিয়েছি।’
তবে ওষুধ এবং তহবিলের ঘাটতি ছিল বলে ডিনের দাবি অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, “হাসপাতালে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ পাওয়া যায়। হাসপাতালের তহবিলে ১২ কোটি রূপি আছে। এ ছাড়া এই আর্থিক বছরের জন্য ৪ কোটি অনুমোদিত হয়েছে। অন্যান্য রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করা হচ্ছে।”
এদিকে একই হাসপাতালে এত রোগীর মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে মুম্বাইতে সাংবাদিকদের বলেছেন যে হাসপাতালে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে আরও তথ্য চাওয়া হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহারাষ্ট্রের মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ডিরেক্টর ডাঃ দিলীপ মহিসকার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন যে এতগুলো মৃত্যুর তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতালে যাচ্ছেন বলেও জানান।
এদিকে একদিনে এত মৃত্যুর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যান্য রোগীদের যারা গুরুতর নয় এবং সমস্ত নতুন আসা রোগীদের কাছাকাছি সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছে।
এদিকে সরকারি হাসপাতালে একদিনে এতো মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্ডে সরকারকে আক্রমণ করেছে রাজ্যের বিরোধীরা। এই ঘটনায় ‘ট্রিপল-ইঞ্জিন সরকার’ অর্থাৎ বিজেপি, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা এবং অজিত পওয়ারের এনসিপি-কে এর দায় নিতে হবে বলেও দাবি করেছে তারা।