শজনে পাতা অতিপরিচিত পুষ্টি ও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাবার। প্রায় ৩০০ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এটি। এ ছাড়া একজন মানুষের প্রয়োজনীয় সব ভিটামিনসহ এমিনো এসিডও রয়েছে এতে। এ জন্য শজনে পাতাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ও বলা হয়।
মানবদেহে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এ পাতার জুড়ি মেলা ভার। গবেষকরা শজনে পাতাকে বলে থাকেন নিউট্রিশন্স সুপার ফুড এবং শজনে গাছকে বলা হয় মিরাকেল ট্রি। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০০ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে শজনে পাতা।
জানা যায়, শজনে পাতায় একটি কলা থেকে ৩ গুণ বেশি পটাশিয়াম, লেবু থেকে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ আছে। এ ছাড়া অন্যান্য শাকের তুলনায় শজনে পাতায় ২৫ গুণ বেশি আয়রন রয়েছে। এতে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও জিংক রয়েছে। এ ছাড়া শ্রমজনিত ক্লান্তি, শরীরের ব্যথা ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে এটি। এ ছাড়া শজনে বীজের মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিজ। এটা পানি বিশুদ্ধকরণে অত্যন্ত কার্যকারী।
শজনে পাতা ও বীজ (মরিঙ্গা বীজ) রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে আগের থেকেও বেশি স্বাস্থ্যকর করে তোলে। চলুন জেনে নিই শজনে পাতা কী কী রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে–
ত্বক ও চুলের সুরক্ষা
গবেষণায় দেখা গেছে, মরিঙ্গা বীজের তেল ত্বকের ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মরিঙ্গা বীজের তেল চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
লিভার রক্ষা
মরিঙ্গা বা শজনে পাতা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার থেকে রক্ষা করে।
ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মরিঙ্গায় এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই পাতায় নিয়াজিমিসিন রয়েছে, যা ক্যানসার কোষের বিকাশকে দমন করে। বিজ্ঞানীদের মতে, মরিঙ্গা পাতা, বাকল এবং গাছের অন্যান্য অংশের নির্যাসে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলতে পারে।
পেটের রোগ
মরিঙ্গার নির্যাস কিছু পেটের রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মরিঙ্গা পেটের অম্লতা প্রায় ৮৫ শতাংশ কমায়। এ ছাড়া এটি পেপটিক আলসার প্রতিরোধ করতে পারে।
মরিঙ্গার অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্রমণের কারণ হতে পারে এমন প্যাথোজেনগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
মরিঙ্গায় এমন পদার্থ রয়েছে, যা কিছু খাদ্যজনিত রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। যেমন: স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস (এস. অরিয়াস) এবং এসচেরিচিয়া কোলি (ই. কোলি)।
আর্থ্রাইটিস
মরিঙ্গার নির্যাসে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
উদ্বেগজনিত সমস্যা
মরিঙ্গার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আলঝেইমার রোগ, নিউরোপ্যাথিক ব্যথা এবং বিষণ্নতার মতো রোগ সমাধানে ভূমিকা রাখে।
কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম রক্ষা
মরিঙ্গায় রয়েছে ট্রাস্টেড সোর্স অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট। যেমন: কোয়ারসেটিন, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস
মরিঙ্গা পাতার নির্যাস ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির উপকার করতে পারে। যেমন: রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
হাঁপানির চিকিৎসা
মরিঙ্গায় এমন অণু রয়েছে, যা হাঁপানি, শ্বাসনালি সংকোচন এবং শ্বাসনালিতে প্রদাহ পরিচালনা বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষকরা তাদের মরিঙ্গা নির্যাস দেয়ার পর ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হয়েছে।
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ
ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে মরিঙ্গার নির্যাস কিডনিতে খনিজ তৈরি এবং পাথর তৈরি করা বন্ধ করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস
মরিঙ্গায় এমন পদার্থ রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, একদল সুস্থ ব্যক্তি এক সপ্তাহের জন্য ১২০ গ্রাম রান্না করা মরিঙ্গা পাতা খেয়েছিল, অন্য দল খায়নি। যে দল খেয়েছিল তাদের রক্তচাপ কম ছিল।
চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি
মরিঙ্গায় রয়েছে বিশ্বস্ত উৎস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন, যা চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং চোখের রোগ প্রতিরোধের জন্য বিরাট ভূমিকা রাখে।