কিশোর-কিশোরী বলতে আমরা ১৩-১৯ বছরের বাচ্চাদের বুঝি। হরমোনের জন্যই হোক বা বয়ঃসন্ধি, এই বয়সে ছেলে-মেয়েদের আচরণে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। চলমান শারীরিক পরিপূরক প্রক্রিয়া শিশুদের চাহিদা, আগ্রহ এবং মেজাজ পরিবর্তন করার জন্য সরাসরি শরীর ও মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। হঠাৎ করেই অবাধ্য হয়ে উঠে সন্তান, ভেতরে আসে একটা বিল্পবী ভাব। অনেকসময় বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়।
এই সময়ে স্কুল-কলেজে থাকছে এবং এখানে বিভিন্ন পরিবেশ-পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েদের সাথেও মিশছে। এসব জায়গা থেকে আপনার সন্তানটি প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখছে। বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে যা যা শিখছে সব যে ভালো তাও কিন্তু নয়। তাই এই সময় সন্তানের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সবসময় তাদের সমালোচনা করবেন না
এই বয়সে সন্তানের সব কাজের দোষ বের করা ও সমালোচনা করবেন না। তাদের পছন্দ-অপছন্দ মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তাদের সঙ্গে পছন্দের ভিডিও গেম বা ছবি দেখতে পারেন। তাদের বিভিন্ন কাজে উৎসাহ দিন, তাকে বোঝান আপনি তার সঙ্গে আছেন।
সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন
বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবতে পছন্দ করে এবং মনে করে কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এ সময়ে তারা পরিবারের থেকেও বন্ধুদের গুরুত্ব দেয় বেশি। তাই তাদের জানানো প্রয়োজন যে, আপনি তাদের যে কোনো বিষয়ে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। তাদের সব প্রয়োজনে আপনি পাশে আছেন বন্ধুর মতো। সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আপনি কখনো কঠোর হতে পারেন কিন্তু কঠোরতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সন্তান ভুল বুঝবে আপনাকে।
সন্তানকে গুরুত্ব দিন
তাদের বোঝান যে আপনি তাদের প্রতি খুবই যত্নশীল। এটা করার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। তাদের প্রিয় খাবার প্রস্তুত করে বা পছন্দের কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। এমনকি তাদের পছন্দ হয়ে এমন আলাদ কিছুও করতে পারেন। এ বয়সের সন্তান আপনার মনের অবস্থা ধরতে পারবে না। তাই তাদের সঙ্গে আপনার একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই বয়সে বাবা-মার সমর্থন খুবই দরকার সন্তানের।
সন্তানের কথা শুনুন
সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের কিছু সীমা নির্ধারণ এবং স্বচ্ছতা রাখতে হবে। আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কি ধরণের বাবা বা মা হতে চান। সন্তানের সঙ্গে একটি ভালো সম্পর্কের জন্য আপনার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। ভালো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি চান আপনার কিশোর সন্তান আপনার কথা মানতে, তাহলে আপনাকেও কিন্তু তার কথা শোনার সময় ও ধৈর্য্য থাকতে হবে।
যখন আপনি আপনার জীবন এবং কাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো আপনার কিশোর সন্তানের সাথে শেয়ার করবেন, তখন আপনার সন্তান জানবে যে, আপনি তাকে গুরুত্ব দেন এবং তার জীবনের বিষয়ে সে আপনার সাথে খোলাখুলি কথা বলতে পারে।
সহানুভূতিশীল হবেন
মনে রাখবেন, আপনিও কোনো একসময় কিশোর ছিলেন। আপনার কিশোর আচরণের অনুভূতির অভাবনীয় ব্যাপারগুলো চিন্তা করুন। বুঝতে চেষ্টা করুন, আপনার কিশোর সন্তানটি কেমন অনুভব করছে। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে চেষ্টা করুন। যখন আপনি সন্তানদের অনুভূতিকে বুঝতে পারেন, তখন তারা বুঝতে পারে যে তাদের অনুভূতি, ধারণা এবং মতামতকে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।