বয়স ৬০! কী খাবেন, কী খাবেন না

0
359

বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুস্থ থাকতে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে। বিশেষ করে বয়স ৬০ পেরোলে শরীরে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সময় ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন।

বয়স ৬০-এর পরে কী হয়?
১. মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে খাদ্য বিপাক ক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে বেশি বয়সে কম ক্যালোরি অর্থাৎ কম খাবারের প্রয়োজন। তাই অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো এ বয়সে।

২. বয়স যত বাড়ে, হাড় এবং পেশির সমস্যার কারণে চলাচল এবং নড়াচড়া কমে যায়, যার কারণে শরীর কম ক্যালরি ব্যবহার করে।

৪. বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাদ বা ঘ্রাণ শক্তি কমে যেতে থাকে। এ ছাড়া যাওয়া দাঁতের রোগ বা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। যার কারণে অনেক সময় খাবারের রুচিও কমে যেতে পারে।

৫. বয়স বাড়লে শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের পানির চাহিদা অনুযায়ী তৃষ্ণা কমে যেতে পারে। ফলের পানিশূন্যতা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

৬. খাবার থেকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পুষ্টিগুণ শোষণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে হাড়ের ক্ষয়, অপুষ্টিজনিত রোগ বেড়ে যায়।

৭. ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য রোগের কারণে অনেক ধরনের খাবারের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকে।

৬০ এর পর কী খাবেন

১. অতিরিক্ত খাবার নয়, পরিমিত খাবার
বয়স যত বাড়বে ততই পরিমাণে অল্প কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি অতিরিক্ত মেদ এড়াতে পরিমিত পরিমাণে উচ্চ পুষ্টিমানের খাবার খাওয়া উচিত।

২. আমিষ বা প্রোটিন
বয়স যত বাড়বে মাংসপেশির দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি ক্ষয় হতে থাকে। তাই এই দুর্বলতা ও অতিরিক্ত ক্ষয় রোধ করতে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। নিয়মিত খাবারে ডিম, মাছ, মাংস জাতীয় প্রাণিজ খাদ্য, আমিষ এবং ভিটামিন বি১২ রাখা উচিত। এ ছাড়া উদ্ভিজ্জ আমিষ পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকারের ডাল, শিম, বাদাম ইত্যাদি থেকে।

৩. ফাইবার জাতীয় খাবার
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিপাক হাড় কমতে থাকে। তাই এ সময়ে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পেতে ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি করে খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। শাকসবজি ফলমূল সবসময়ই পরিপূর্ণ পুষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

৪. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি
৬০ বছরের পর শরীরের হাড় দুর্বল ও ক্ষয় হতে থাকে। তাই এ বয়সেও নিজেকে ফিট ও সচল রাখতে এবং হাড় সুস্থ রাখতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুগ্ধজাত খাবার ও গাঢ় সবুজ শাক জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এ ছাড়া ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছের তেল ও খাওয়া উচিত।

৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান
পানিশূন্যতার কারণে শরীরে অনেক ধরনের জটিলতা কারণ হতে পারে। তাই দিনে নিয়মিতভাবে পানি কয়েকবার পান করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করবেন।

৬. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনগুলো প্রতিরোধ করে। আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বলতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই বোঝায়। রঙিন ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, শস্য বীজ এমনকি চা-কফি, ডার্ক চকলেটেও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। নিয়মিত খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলমূল রাখা উচিত।

৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া
নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টি ভিটামিন ক্যাপসুল প্রবীণরা গ্রহণ করতে পারেন। এতে করে বাড়তি পুষ্টি পাওয়া যায় এবং দীর্ঘদিন সুস্থতা ধরে রাখা যায়।

৬০ এর পর যা খাবেন না

১. বয়স বাড়লে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ সময়ে অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করা উচিত। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লবণ পরিমিতভাবে গ্রহণ করতে হবে।

২. বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে, তাই এই বয়সে অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করাই উত্তম।

৩. অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া পেটে সমস্যা করতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস বা পেট ফাঁপার মত সমস্যা তৈরি করে। তাই এ সময়ে বাহিরের খাবার বা অতিরিক্ত ভাঁজা-পোড়া খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।