ঢাকার যে ১১ এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি

0
211
ডেঙ্গু চিকিৎসা। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আলাদা ইউনিট করে এবং শয্যা বাড়িয়েও রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত কয়েক দশকে এবারই ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সারা দেশের মধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশি নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ছয়টি এলাকা রয়েছে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে আছে যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমন্ডি ও বাসাবো।। উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে: উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও বাড্ডা।

রোববার (২৩ জুলাই) দুপুরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার।

জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ১৮ থেকে ২৭ জুন জরিপ চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডে পরিচালিত জরিপে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক মশার প্রজননস্থল শনাক্ত, পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি লার্ভা পাওয়ার অর্থ ঢাকায় এবার এডিস মশাও বেশি পাওয়া যাবে।

অধিদফতর জানিয়েছে, রাজধানীর ১৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সাধারণত কোনো এলাকার ৫ শতাংশ বাড়িতে এই লার্ভা পাওয়া গেলে ওই পরিস্থিতিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।

বেশি আক্রান্ত শিশু ও যুবকরা

ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও যুবকরা। আক্রান্তদের ৮০ ও মারা যাওয়াদের ৬০ শতাংশের বয়স ৪০ এর নিচে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এ অবস্থায় রোগীদের নিয়ে স্বজনদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক পর্যালোচনা বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৬০ শতাংশের বয়স ৪০ এর নিচে। একইভাবে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন ৮০ শতাংশ ৷

ডেঙ্গু আক্রান্তরা বলছেন, জ্বরসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়ার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ না নেয়ায় সমস্যা অনেক বেশি হচ্ছে।

আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ

এদিকে সবশেষ শনিবার পর্যন্ত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অবস্থার ভয়াবহতা বলছে, আগামী দুই মাস আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আরও পড়ুন: ঢাকা ছেড়ে এলেও পিছু ছাড়ছে না ডেঙ্গু

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ডেঙ্গুর পিক টাইম এখনও শুরু হয়নি। বিশ্বব্যাপী জ্বলবায়ুর যে প্রভাব, তাতে সামনে বৃষ্টি বাড়বে না কমবে, কেউ জানে না। পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, যেখানে-সেখানে ভবন নির্মাণের কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে মৃত্যু কমাতে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান। তিনি বলেন, হাসপাতালে দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সবার আরও সচেতন হওয়া জরুরি।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘উপসর্গ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। এ বিষয়ে যেন কেউ কালক্ষেপণ না করে।’