নেদারল্যান্ডসে এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির মেরুদণ্ডের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগকারী ইমপ্লান্ট ব্যবহারের পর আবারও হাঁটতে পারছেন ওই ব্যক্তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা প্রথম কোনো ঘটনা। যা এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির জীবন বদলে দিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন মতে, এখন থেকে ১২ বছর আগে সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন গার্ট-ইয়ান ওসকাম। দুর্ঘটনায় চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৪০ বছর। সম্প্রতি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে ইমপ্ল্যান্ট সংযোগের মাধ্যমে ফের হাঁটতে পারছেন ওসকাম।
নেদারল্যান্ডসের একদল চিকিৎসক ওসকামের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মাঝে একটি ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন করেন। এর অংশ হিসেবে পুরো গবেষণায় ওসকাম প্রায় ৪০টি নিউরো-রিহ্যাবিলিটেশন সেশনে অংশ নেন। বর্তমানে ওসকাম একবারে প্রায় ১০০ মিটার, ক্ষেত্রবিশেষে এর থেকে বেশি দূরত্বও অতিক্রম করতে পারেন।
সুস্থ হওয়ার পর সম্প্রতি বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে ওসকাম বলেন, ‘আমি আবারও হাঁটতে পারার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে এটা সম্ভব। এখন আমার কাচ্ছে নিজেকে একজন শিশুর মতো মনে হচ্ছে। যেন নতুন করে হাঁটতে শিখছি।’
ওসকাম জানান, চীনে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন তিনি। এরপর তিনি মনে করেছিলেন, দেশে ফিরে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি জানতে পারেন, তার চলাচলের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তখনও তৈরি হয়নি।
এরপর প্রথমে সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির নিউরোসায়েন্টিস্ট গ্রেগোয়া কোর্টিনের অধীনে ওসকাম একটি ট্রায়ালে অংশ নেন। ২০১৮ সালে গ্রেগোয়া ও তার দল মনে করেন, প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ উজ্জীবিত করে চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলা ব্যক্তিকে সুস্থ করা সম্ভব। তবে দীর্ঘ তিন বছর চেষ্টা করা হলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
এরপর সম্প্রতি ওসকামের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে গবেষক গ্রেগোয়া বলেন, ‘আমরা মূলত অসকামের চিন্তাগুলোকে আয়ত্ত করেছি এবং সেগুলোকে মেরুদণ্ডের উদ্দীপনায় রুপান্তর করেছি। যার ফলে তার মেরুদণ্ডে স্বেচ্ছায় চলাচলের সক্ষমতা ফিরে এসেছে।’
গবেষকেরা জানান, পরবর্তী অগ্রগতির অংশ হিসেবে এ প্রযুক্তিটি চালাতে যে হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয় সেটিকে ক্ষুদ্র আকারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে অসকাম ব্যাকপ্যাকের সাহায্যে হার্ডওয়্যারটি বহন করে থাকেন। ঠিক একই পদ্ধতি হাতের নাড়াচাড়া করার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করা যায় কিনা সেটারও চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত কয়েক দশকে মেরুদণ্ডের আঘাতের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ‘টার্গেটেড ইলেক্ট্রিক্যাল পালস’ মেরুদণ্ডে পাঠানোর মাধ্যমে স্ট্রোকের পর হাতের নাড়াচাড়া করার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
ওসকামের চিকিৎসায় যুক্ত থাকা গবেষকেরা আশা করছেন, তাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তিটিও ভবিষ্যতে হাতের নড়াচড়ার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে কাজে লাগানো যাবে। একই সাথে সময়ের সাথে সাথে নিজেদের রিসোর্স বৃদ্ধি করে স্ট্রোকের রোগীদের চিকিৎসায়ও প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা যেতে পারে।