অতিরিক্ত চিনি খাওয়া যেমন খারাপ, আবার একইভাবে বেশি লবণ খেলেও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
মশলাদার নোনতা খাবার অথবা খাবারের পরে মিষ্টান্ন পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। তবে হৃদপিণ্ডের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়ে অনেকেই সচেতন নয়।
কয়েক দশক আগেই গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি চিনি ও লবণ সমৃদ্ধ খাবার হৃদপিণ্ডের জন্য ঝুঁকিকর। আর হৃদরোগের অন্যতম কারণও এটি।
নয়া দিল্লির ওখলা’তে অবস্থিত ‘ফোর্টিস এস্কোর্ট হসপিটালের ‘কসালটেন্ট নিন-ইনভেসিভ কার্ডিওলজিস্ট’ ডা. মহিত ট্যান্ডন হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিনি ও লবণ হৃদপিণ্ডে কতটা ক্ষতি করে সে সম্পর্কে জানান।
যে কারণে চিনি খারাপ-
প্রক্রিয়াজাত বা কৃত্রিম মিষ্টির মতো প্রাকৃতিক শর্করা ক্ষতিকারক নয়। ভাজাপোড়া খাবার, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত ফলের রস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, কেক ইত্যাদি এই ধরনের চিনি সমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগের সৃষ্টি করে।
জামা ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. ট্যান্ডন বলেন, যারা বাড়তি শর্করা থেকে ১৭ থেকে ২১ শতাংশ ক্যালরি গ্রহণ করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই যত বেশি শর্করা গ্রহণ করা হবে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে।
শর্করা সরাসরি হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে না। তবে পরোক্ষভাবে অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে ক্ষতিসাধন করে বলে জানান এই চিকিৎসক।
অতিরিক্ত শর্করা লিভার বা যকৃতের মাধ্যমে বিপাকিত হয়ে চর্বিতে রূপান্তরিত হয় যা পরে ‘ফ্যাটি লিভার’ ও স্থূলতা সৃষ্টি করে। যা থেকে হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাড়তি শর্করা ধরনের খাবার খাওয়া দ্রুত ওজন বাড়ায়। বাড়তি শর্করা মানে সরল কার্বোহাইড্রেইট যা সহজেই পরিপাক হয়। মিষ্টি পানীয় যেমন- সোডা, কোমল পানীয় শক্ত খাবারের মতো পেট ভরায় না। তাই প্রোটিন বা চর্বিবহুল অথবা আঁশ সমৃদ্ধ খাবারের মতো পরিতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব না। অতিরিক্ত বাড়তি শর্করা দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এবং রক্তচাপ বাড়ায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
হৃদপিণ্ডের ওপর লবণের প্রভাব-
লবণ মানে সোডিয়াম গ্রহণ করা। যদিও সোডিয়াম সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় খনিজ। তবে এর মাত্রাতিরিক্ততা ক্ষতিকর।
ডা. ট্যান্ডন জানান, একজন প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য দৈনিক ১ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম প্রয়োজন।
‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথোরিটি অব ইন্ডিয়া’ অনুসারে দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা পাঁচ গ্রামের কম হওয়া উচিত। তাছাড়া লবণই সোডিয়ামের এক মাত্র উৎস নয়। পাউরুটি, পিৎজ্জা, স্যান্ডউইচ, হিমায়িত মাংস, সুপ, মজাদার নাস্তা, পোল্ট্রি, পনির, অম্লেট ইত্যাদি নানান রকম খাবারে প্রচুর সোডিয়াম থাকে।
কিডনি সোডিয়াম বিপাক করে। অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ দেহে পানি জমাট বাঁধায় ও ওজন বাড়ে। এটা রক্তের প্রবাহ বাড়ায়, ফলে হৃদপিণ্ডের কাজ বাড়ে। যে কারণে রক্তচাপ বাড়ে এবং ধমনীতে চাপ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘমেয়াদে এটা ‘হাইপারটেনশন’ বা উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ডা. টেন্ডন বলেন, ‘এ কারণে পায়ে ও গোড়ালিতে ফোলাভাব দেখা দেয়। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার কম সোডিয়াম গ্রহণ নিম্ন রক্তচাপের জন্য দায়ী।’
লবণ না চিনি-
অরিতিক্ত চিনি স্থূলতা সৃষ্টি করে, ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকারক এবং ধমনীর দেওয়ালে চর্বি, কোলেস্টেরল-সহ অন্যান্য উপাদান বাড়ায়। অন্যদিকে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ রক্তচাপ ও হৃদ ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত চিনি বা লবণ- দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই খাবার গ্রহণের সময় দুই উপাদানই পরিমিত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সুস্থ থাকতে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ও কম সোডিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। খাবার তালিকায় শস্য, শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।