ভীষণ সংবেদনশীল পোষা প্রাণীর মধ্যে পাখি অন্যতম। একেবারে দুগ্ধপোষ্য শিশুর মতো যত্ন না পেলে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে’! এই উড়ে যাওয়ার মানে মৃত্যুও হতে পারে। ফলে পাখি পোষার আগে হাতে যথেষ্ট সময় এবং মনে যথেষ্ট ভালোবাসা আছে কি না, তা যাচাই করুন। সব ঠিক থাকলে পাখি কিনুন দেখেশুনে। ঢাকার কাঁটাবনের পাখি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাখির যত্নে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো এখানে।
১. খাঁচার পাখি স্বভাবতই নাজুক প্রকৃতির। এরা কোনো কিছুই ‘অতি’ সহ্য করতে পারে না। অতি রোদ, অতি বাতাস কিংবা অতি শীতে এদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। ফলে পাখির খাঁচাটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে না, সরাসরি বাতাস এসে ধাক্কা দেয় না, শীত হানা দেয় না। বৃষ্টির ছাঁটেও এরা কাবু হয়ে যায়।
তাই বারান্দায় খাঁচা রাখলে তিন পাশে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের দেয়াল তৈরি করে দিতে পারেন।
২.খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে পানির বেলায়। ফুটিয়ে ঠান্ডা করা পানি প্রতিদিন সকালে পাত্রে দিয়ে রাখুন। পানি নোংরা হওয়ামাত্রই আবার বদলে দিন। আর পানির পাত্রটি যেন প্রতিদিন পরিষ্কার থাকে, সেটাও নিশ্চিত করুন। পাখিদের গোসলের জন্য আলাদা পাত্রে দুপুরের দিকে পানি দিয়ে রাখুন। গোসল শেষে সরিয়ে ফেলুন।
৩.একেক পাখির খাবার একেক রকম। পাখি কেনার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে, গুগলে সার্চ করে জেনে নিন, আপনার পাখির খাবার কী। যেসব খাবার পাখির খাদ্যতালিকায় নেই, তা খাওয়াবেন না। এতে পাখির সমস্যা হবে। আর খাবারের গুণগত মানও যেন ঠিক থাকে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
৪.অধিকাংশ পাখি সাধারণ খাবার থেকে ক্যালসিয়ামসহ আরও কিছু খনিজ উপাদান সঠিক মাত্রায় পায় না। তাই খনিজ উপাদানের জোগান দিতে কাটলফিশ বোনের টুকরা, মিনারেল ব্লক খাঁচায় রেখে দিতে হবে। কেবল ধান, গম, যব বা ভুট্টা খাওয়ালেই হয় না; শাক, বরবটি, অ্যালোভেরার রসের মতো খাবার দেওয়াও জরুরি। ফিশার্স লাভবার্ডকে যেমন সপ্তাহে এক দিন শজনেপাতা দিলে উপকার পাবেন।
৫.খাঁচায় থাকার ফলে পাখিদের ‘শরীরচর্চা’ ঠিকমতো হয় না। এর ব্যবস্থাও আপনাকে করতে হবে। খাঁচার ভেতর ছোট মই, দোলনা, ঝুনঝুনি, প্লাস্টিকের বল রেখে দিন। পাখিরা এসব নিয়ে খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুটোই ঠিক থাকবে। হ্যাঁ, পাখিদেরও মন খারাপ হয়। বিষণ্ন পাখি কিছু খায় না, অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্রুত। এমনটা বেশি হয় পাখি কোনো অসুখে পড়লে কিংবা সঙ্গীর অভাবে।
৬.পাখির কাজই হলো অর্ধেক খাবার খাওয়া আর বাকি অর্ধেক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে নোংরা করা। এটা মেনে নিতে হবে। আর প্রাকৃতিক কর্ম তো আছেই। তাই পাখির খাঁচা প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হবে।
৭.পাখিদের বিরক্ত করবেন না। খাঁচার বাইরে থেকে খোঁচাখুঁচি করা, খাবার ছুড়ে দেওয়া, লেজ ধরে টান দেওয়া—একেবারেই করা যাবে না। পাখি ভয়ে থাকলে কিছুই খাবে না, অসুস্থ হয়ে পড়বে। পাখির সঙ্গে বরং কথা বলুন, আস্তে–ধীরে হাত দিয়ে খাবার দিন। অনেক পাখিই তীক্ষ্ণ ঠোট দিয়ে ঠোকর দেয়। পাখির সঙ্গে ভালো আচরণ করলে একসময় দেখবেন আপনাকে আর ঠোকর দেবে না, যা বলবেন তা–ই শুনবে।