নেইমার ও চোট যেন একে অপরের পরিপূরক। ফুটবল বিশ্বে ব্রাজিলিয়ান তারকার মতো এমন দুর্ভাগা কমই আছেন, যাকে মাঠের চেয়েও বেশি মাঠের বাইরে থাকতে হয়। সম্প্রতি কাতারে ডান পায়ের লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন ৩১ বছর বয়সী এ তারকা। তাতে এ মৌসুমে আর তার মাঠে নামা হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। কবে নাগাদ ফিরবেন, সে বিষয়েও নেই কোনো নিশ্চয়তা।
এমনটা অবশ্য নতুন কিছু নয় নেইমারের জন্য। গত দশ বছরে ৩০ বারের বেশি চোটে পড়েছেন তিনি। মাঠের বাইরে ছিলেন প্রায় ৯০০ দিন। মিস করেছেন প্রায় দেড় শতাধিক ম্যাচ।
মাঠের বাইরে সময়টা অবশ্য নেইমারের জন্য খারাপ নয়। ফুটবলের বাইরের জীবনকেও বেশ উপভোগ করেন ব্রাজিলিয়ান এ উইঙ্গার। তার ফেসবুক পেজে উঁকি দিলে দেখা যাবে, সেখানে নিজেকে অ্যাথলিট বা ক্রীড়াবিদ হিসেবে পরিচয় না দিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন গ্যামিং ভিডিও ক্রিয়েটর হিসেবে; বাস্তবতাও তাই।
ফুটবলের বাইরের সময়টায় ভিডিও গেম খেলতে ভালোবাসেন নেইমার। সামাজিকমাধ্যমে মোবাইল লেজেন্ডস, পাবজিসহ একাধিক ভিডিও গেমের বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রায় হাজির হন তিনি। মাঝেমধ্যে সমর্থকদের লাইভেও আমন্ত্রণ জানান তিনি।
সম্প্রতি অনলাইনে তার পোকার গেম খেলা নিয়ে ফুটবল বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছিল চাঞ্চল্যের। কারণ এ খেলায় ১০ লাখ ইউরো হারিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। পরে অবশ্য ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে গ্লোবো থেকে জানা যায়, নেইমারের কান্না ছিল অভিনয়। তিনি কোনো অর্থ হারাননি। এটি অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার অংশ ছিল। নেইমারের লাইভে আসা এবং কান্না করাও ছিল এ প্রচারণার অংশ। উদ্দেশ্য, অনলাইনে জুয়া খেলায় বিখ্যাত ব্যক্তিরাও যে বিরাট অঙ্কের অর্থ হারাতে পারেন, তা সাধারণ মানুষকে বোঝানো।
ফুটবলের বাইরে যে নেইমার শুধু ভিডিও গেম খেলায় ব্যস্ত থাকেন, বিষয়টি এমনও নয়। খেলার বাইরে নেইমার খুবই আমোদপ্রমোদ প্রিয়। কখনো প্রিয়জনের সঙ্গে, কখনো পরিবারের সঙ্গে আবার কখনো বন্ধুদের সঙ্গে; যখনই সুযোগ পান কোনো পার্টিই হাতছাড়া করেন না নেইমার। তিনি যে কতটা আমোদপ্রমোদ প্রিয়, সেটার উদাহরণ টানতে বেশিদূর যেতে হবে না।
কাতার বিশ্বকাপের ব্যর্থতায় ব্রাজিলিয়ানরা যখন দুঃখের সাগরে ভাসছিল, তখন বোনের বাসায় পার্টি করে সমালোচিত হন নেইমার। এছাড়া বিশ্বকাপের পর ক্লাবে যখন পাড়ি দিয়েছিলেন, তখনো বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে হারের পর পার্টিতে যোগ দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন নেইমার। সঙ্গীতটাও বেশ ভালোবাসেন তিনি। খেলার মাঠে প্রবেশের আগে-পরে, যেকোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আগে-পরে – সারাক্ষণই তার কানে হেডফোন দেখা যায়। গাড়ি চালানো অবস্থাতেও হাত-পা নাড়িয়ে তার গান শোনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে একাধিকবার।
আমোদপ্রমোদের জন্য তার সংগ্রহে আছে ব্যক্তিগত ইয়ট, জেট আর বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি। যেগুলো নিয়ে ভূমি, আকাশ কিংবা সমুদ্র – যখন যেখানে খুশি সেখানে ঘুরতে বেরিয়ে যান এ ফুটবলার। যেখানে তাকে আবার একেকবার একেক সঙ্গীর সঙ্গে দেখা যায়। তার প্রথম প্রেমিকা ক্যারোলিনা দান্তোস, যিনি তার ছেলে দাভি লুকার মা।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মাত্র ১৯ বছর বয়সে পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছিলেন নেইমার। সন্তান জন্মদানের কিছুদিন পর এ দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। এখন পর্যন্ত অবিবাহিত নেইমারের বান্ধবীর তালিকায় এরপর একে একে যোগ হন ব্রাজিলিয়ান অভিনেত্রী ব্রুনা মারকুইজিন, ব্রাজিলিয়ান গায়িকা আনিত্তা, ব্রাজিলিয়ান তারকা মডেল ও অভিনেত্রী থাইলা আয়লার, স্প্যানিশ আইনজীবী এলিজাবেথ মার্টিনেজ।
সবশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ব্রুনা বিয়েনকার্দির সঙ্গে গত বছর তার বিচ্ছেদ ঘটে। এখন অবশ্য নতুন করে ব্রাজিলিয়ান মডেল অভিনেত্রী ও ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার জেসিকা তুরিনির সঙ্গে তার সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।