রোজায় দীর্ঘ ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টার খাবার ও পানি বিরতিতে থাকতে হয়। এ দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার কারণে বিপাকে পড়তে পারেন রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার রোগীরা। তাই আজকের আয়োজনে জেনে নিন, রোজার সময় কোন খাবারগুলোকে ডায়েট লিস্টে প্রাধান্য দেবেন।
রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার রোগীদের মধ্যে যেসব সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হলো: দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঝিমঝিম করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া ইত্যাদি।
এ ছাড়াও রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা আরও যে সমস্যায় পড়েন সেগুলো হলো: কাজকর্মে অনীহা, অনিদ্রা, অল্পতে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, জিব ও ঠোঁট মসৃণ ও সাদাটে হয়ে যাওয়া, মুখের কোনায় ও জিবে ঘা হওয়া, নখে ভঙ্গুরতা বা চামচের মতো গর্ত হওয়া, অরুচি, বমি বমি ভাব, হজমে ব্যাঘাত ঘটা এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া।
এ সমস্যাগুলো আরও তীব্র হয়ে ওঠে যখন রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভোগা রোগীরা রোজা রাখতে শুরু করেন। এ সমস্যাকে জয় করে রোজা রাখার মতো ফরজ কাজটি করতে ডায়েটে বিশেষ কয়েকটি খাবার রাখুন।
কলিজা: কলিজায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি আছে। রক্তস্বল্পতা রোগের প্রধান কারণ দেহে আয়রনের ঘাটতি। তাই রক্তশূন্যতায় ভুগছেন যারা, তাদের নিয়মিত খাবারতালিকায় কলিজা রাখা উচিত। খাসি বা গরুর কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের অবশ্যই গরুর কলিজা থেকে দূরে থাকতে হবে।
দুধ: দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন জোগাতে সাহায্য করে। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন আছে। এ ছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়া উপকারী।
মাছ: আয়রনের ভালো উৎস হলো মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ। তা ছাড়া ছোট মাছ যেমন: শিং, টেংরা ইত্যাদি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তাই রক্তস্বল্পতা রোগ থেকে দেহকে মুক্ত রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখুন।
ফলমূল: ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতিদিন আয়রনযুক্ত ফল যেমন: আপেল, টমেটো, বেদানা, কলা, আঙুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সরাসরি আয়রন গ্রহণ করতে প্রতিদিন ২-৩টি ফল খেতে ভুলবেন না।
শাকসবজি: শাকসবজিতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। বিভিন্ন রকম সবজি, যেমন: কচুশাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রোকলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ, এই শাকসবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক অ্যাসিড আছে যেগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
ডাল: রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিদিন মসুর, মুগ কিংবা মাসকলাইয়ের ডাল খেতে পারেন। কারণ, এই খাবারগুলোতে প্রচুর ফোলেট পাওয়া যায়। ফোলেট রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ডিম: ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। রক্তস্বল্পতা কমিয়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে ডিম খুব উপকারী। ডিমের কুসুমের মধ্যে রয়েছে আয়রন। এটি শরীরে লোহিত রক্তের কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।
ভিটামিন সি-জাতীয় ফল: আমাদের দেহে রক্তকোষ তৈরিতে ভিটামিন সি-জাতীয় যেকোনো ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। তাই প্রতিদিন ভিটামিন সি-জাতীয় ফল খাওয়া উচিত দেহের রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য।
মধু: মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন এক চামচ মধু খেতে পারেন।
সয়াবিন: সয়াবিনে রয়েছে উচ্চমাত্রায় আয়রন ও ভিটামিন। এর মধ্যে থাকা সাইটিক অ্যাসিড রক্তস্বল্পতার সঙ্গে লড়াই করে। সয়াবিনের রয়েছে কম পরিমাণ চর্বি ও অধিক পরিমাণে প্রোটিন। প্রোটিনও অ্যানেমিয়া প্রতিরোধে উপকারী।
বাদাম: আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস বাদাম। এই খাবারটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ১০০ গ্রাম বাদামে ১৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। তাই সেহরির সময় ঝটপট একমুঠো বাদাম খেয়ে নিতে পারেন।
সাধারণত শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। রক্তস্বল্পতার সমস্যায় বেশি ভোগেন মেয়েরা। তাই আয়রনে পরিপূর্ণ এসব খাবার রমজানে ডায়েট লিস্টে রাখুন, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করবে।