করোনা-পরবর্তী জটিলতা পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে দেড় থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি। অন্যদিকে, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের জটিলতা ও স্নায়ুবিক জটিলতার ঝুঁকি দ্বিগুণ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিএসএমএমইউতে করোনা-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে করা এ গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকার দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তির কোভিড-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয়ে সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলো-আপ করা হয়। তাতে রোগীদের স্নায়ুবিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়েছে তা দেখা হয়।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নারী ও পুরুষ ভেদে ভিন্ন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের কোভিড পরবর্তী জটিলতায় ভোগার মাত্রা দেড় থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের চেয়ে কম। আক্রান্ত হলেও তাদের সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেয়ার হারও কম। নারীদের রেগুলার সার্কেলটা (মাসিক) তাদের ইমিউনিটি কমিয়ে দেয়। নারীরা অবহেলিত হওয়ায় তাকে সময়মতো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। মৃত্যুপথযাত্রী না হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। পুরুষ নিজে নিজেই চিকিৎসা করেছে, কিন্তু নারীদের বেলায় পরিবারের সদস্যরা সেভাবে যত্ন করেনি। নারীরা বেশি সহনশীল, তারা নিজের কষ্ট বলতেও চায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং আইসিইউ প্রয়োজন হয়েছে এমন রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ষাটোর্ধ কোভিড রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন বা পা ফুলে যাওয়া এবং হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিমঝিম করা বা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতার হার দ্বিগুণ।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে যারা করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন, সেরে উঠে নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়ার পরও তাদের ব্লাড সুগার বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা, হাসপাতালে যাদের ভর্তি হতে হয়নি, তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি।
এ ছাড়া কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনিজনিত জটিলতা এবং লিভারের জটিলতায় ভোগার হার বেশি দেখা গেছে।
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ সেমিনারে বলেন, কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এ গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, তারা যদি নিয়মিত ফলোআপ না করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ না করেন, তবে এই গবেষণার সার্থকতা ম্রিয়মান হয়ে যাবে।