রুটিন চেকআপ কেন জরুরি?

0
361

অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া টেস্ট করাও দ্বিধার ব্যপার। কিন্তু আমাদের শরীরের ভেতরের অবস্থা পরখ করতে রুটিন চেকআপে অভ্যস্ত হওয়া উচিত।

কেননা, এমন অনেক রোগ আছে যা জানান না দিয়েই শরীরে বাসা বাঁধে। এতে অনেক ক্ষেত্রে খুব দ্রুত আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। তাই আমাদের রুটিন চেকআপ করা জরুরি।

যেমন: উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কারণ, বেশির ভাগ সময় এ রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না। অথচ উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এমনকি আকস্মিক মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই যদি আমরা আগে থেকে রোগ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে পারি। তাই নিয়মিত চেকআপ করা জরুরি।

রুটিন চেকআপ হলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজন অনুসারে কিছু প্রাথমিক টেস্ট করা। কিন্তু বয়স, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রার ওপর নির্ভর করে চেকআপের সময় পরিবর্তিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স যদি ৫০ বছরের কম হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তাহলে প্রতি তিন বছরে একবার আর বয়স ৫০ বছরের বেশি হলে বছরে একবার রুটিন চেকআপ করতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন: হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি থাকে, সে ক্ষেত্রে বয়স যতই হোক না কেন, নিয়মিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

তাই রুটিন চেকআপের জন্য প্রথমে একজন চিকিৎসক নির্ধারণ করতে হবে। এবং ওই চিকিৎসককে আপনার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহল করতে হবে। এর পর চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন কী করতে হবে আপনার। প্রয়োজন অনুসারে টেস্ট দেবেন। আর টেস্টের ফলাফল অনুযায়ী চিকিৎসক আপনাকে ওষুধ দেবেন পাশাপাশি পরবর্তী শিডিউল।

রুটিন চেকআপের মধ্যে একদম প্রথমে আছে ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ পরিমাপ করা। এগুলো এতটাই প্রাথমিক যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হয় না। যেকোনো ওষুধের দোকান কিংবা ঘরে মেশিন কিনে নিজে নিজের পরীক্ষা করা যায়।

সহজলভ্য হলেও এ পরীক্ষাগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি হলে বিএমআই বেশি হয় এবং তা নির্দেশ করে স্থূলতা। অজানা নয় যে স্থূলতা সৃষ্টি করে থাকে নানা জটিল রোগ।
এ ছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যেসব টেস্ট রুটিন চেকআপের অন্তর্ভুক্ত সেগুলো হলো:

ইসিজি (ECG): ইসিজির মাধ্যমে ব্যক্তির প্রতিটি হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করা হয়। ইসিজিতে অস্বাভাবিক কিছু দেখা গেলে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

এক্সরে (X Ray): শরীরের অভ্যন্তরীণ যেকোনো সমস্যা নির্ণয় করতে এক্স-রে করতে হয়। হাড় স্থানচ্যুত, হাড়ে ফাটল, হাড় ভেঙে যাওয়া, দাঁতের ক্যারিস ও ফুসফুসের ক্ষত ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয় করতে এক্স-রে করা হয়ে থাকে।

আল্ট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonography): প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাম শুধু পেটের সমস্যা নির্ণয়ে করা হয়। কিন্তু লিভার, হার্ট, কিডনিসহ প্রায় সব অঙ্গেই এই পরীক্ষা করা হয়।

সিবিসি (CBC): সিবিসি হলো Complete Blood Count। এটি একটি স্ক্রিনিং টেস্ট, যার দ্বারা শরীরের বিভিন্ন ইনফ্লামাটরি ডিজিস ও ডিসঅর্ডার পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা কিছু রোগ সরাসরি ধরতে পারেন, আর কিছু রোগ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সিবিসি’র মাধ্যমে রক্তের রেড সেল, হোয়াইট সেল, হিমোগ্লোবিন, প্লাটিলেট, ইএসআর ইত্যাদি সঠিক অনুপাতে আছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়। এসব উপাদান কম বেশি হলে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী পরামর্শ দিবেন।

কোলেস্টেরল ( cholesterol): এটিও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। কোলেস্টেরল বেশি হলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থাকে।

দাঁত পরীক্ষা: দাঁত ভালো রাখতে প্রতি ছয় মাস অন্তর ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা করালে দাঁতের সাধারণ সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের মতো জটিল রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হয়। ডেন্টিস্টের কাছে গেলেই নানা উপায়ে পরীক্ষা ও সমাধান যেমন: ক্লিনজিং, এক্স-রে, প্রয়োজন হলে রুট ক্যানেল করে থাকেন।

চোখ পরীক্ষা: চোখ আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। যদিও খুব বেশি সমস্যা না হলে আমরা চিকিৎকের কাছে যাই না। কিন্তু বিশেষজ্ঞের মতে, চোখের রুটিন চেকআপ করা অনান্য অঙ্গের মতই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের তীক্ষ্ণতা, গ্লুকোমা পরীক্ষা করে থাকেন চিকিৎসক। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা আবশ্যক।