ভূমিকম্প কীভাবে মাপা হয়, জেনে নিন

0
109
ভূমিকম্প মাপা
ছবি: সংগৃহীত
ভূমিকম্প মাপা
ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ-অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই ভূমিকম্প। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে যেমন- দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব- বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে।

পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু।

আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী ও ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভূমিকম্প যেভাবে মাপা হয়

ভূমিকম্প হলে আমরা শুনি যে ৭, ৮ বা ৯ ইত্যাদি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। অনেকে এই মাত্রাকে রিখটার স্কেলের (ML) বলে ধরে নেন। আসলে রিখটার স্কেল কিন্তু এখন আর ব্যাবহার করা হয় না কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে, ছোট ও স্বল্প বিস্তৃতির ভূমিকম্প ছাড়া। এখন ব্যবহার করা হয় মোমেন্ট মাত্রা বা Moment Magnitude (MW) এর স্কেল।

এই স্কেলের ভিত্তি হলো ভূমিকম্পের কিছু ভৌত বৈশিষ্ট, যা সম্মিলিতভাবে নির্ণয় করে মুক্তিপ্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ। আর এই ভৌত বৈশিষ্টগুলো হল- যে শিলাপৃষ্ঠ জুড়ে শিলার স্থানচ্যুতি ঘটল তার আয়তন; স্থানচ্যুতির পরিমাণ; এবং শিলাখন্ডের ভাঙ্গন প্রতিরোধ ক্ষমতা। যত বড় হয় প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট, ততই বেশী হয় মুক্তি পাওয়া শক্তি।
কিন্তু এই বৈশিষ্টগুলো মেপে ভূমিকম্পের মাত্রা বের করা তো অবাস্তব! তবে এজন্য অপেক্ষাকৃত সহজ উপায় আছে। ভূকম্পমিটার বা seismometer নামক যন্ত্র ভূমিকম্পের ঢেউয়ের ব্যাপ্তিকে রেকর্ড করতে পারে। আর এই রেকর্ড করা ঢেউয়ের ব্যাপ্তি থেকে ভূমিকম্পটির মাত্রা পরোক্ষভাবে হিসাব করে বের করা যায়। ঢেউয়ের ব্যাপ্তি যত বড়, ভূমিকম্পও তত বড়।

তবে ব্যাপারটি অত সহজও নয়। রেকর্ড করা ব্যাপ্তির আকার নির্ভর করে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূকম্পমিটারটি থেকে কত দূরে ও মধ্যবর্তী শিলার ভৌতিক গঠন কি তার ওপর। দূরত্ব যত কম, এবং মধ্যবর্তী শিলা যত কঠিন ও ভূপৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে, মোটামুটি তত বড় ব্যাপ্তি।

এছাড়া একটু আগে আলোচিত চার রকমের ঢেউ চার গতিতে ছড়ায় বলে রেকর্ড করা ব্যাপ্তি আরও জটিল হয়ে যায়। কিন্তু গত এক’শ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ভূকম্পমিটারগুলোতে ধরা ঢেউগুলোর আকার এবং পৌঁছানোর সময় বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা কোথায় ও কতটা গভীরে একটি ভূমিকম্প হয়েছে আর কি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তা অনেকটা নির্ভূলভাবেই বলে দিতে পারেন।

একটি ভূ-কম্পমিটারে রেকর্ড করা ‘এস-ওয়েভ’-এর ব্যাপ্তি থেকে ভূমিকম্পটি কত বড় তা বের করা যায়। আর ‘পি-ওয়েভ’ ও ‘এস-ওয়েভ’ গুলোর পৌঁছানোর সময়ের ব্যবধান থেকে বের করা যায় ভূমিকম্পটি ওই মিটার থেকে কত দূরে হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বসানো তিনটি বা তার বেশী ভূকম্পমিটারে হিসাব করা দূরত্ব থেকেই বেরিয়ে আসে ঠিক কোথায় ভূমিকম্পটি ঘটল।

পৃথিবী জুড়ে অনেক ভূকম্পমিটার আছে যারা কোথাও একটা ভূমিকম্প ঘটলেই কমবেশী কাঁপন রেকর্ড করে। মিটারগুলো স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় ও নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রাথমিক বিশ্লেষন রিপোর্ট কম্প্যুটার থেকে বেরিয়ে আসে।

একটু আগেই আমরা শুনলাম যে ভূমিকম্পের মাত্রা শিলার ভাঙ্গন থেকে কতটা শক্তিমুক্তি পেল তারই প্রতিফলন। তবে মাত্রার স্কেলটি আপেক্ষিক ও লগারিদমিক। আপেক্ষিক মানে এই যে একটি ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ৭ বা ৮ একক শক্তিমুক্তি দিয়েছে বলে বোঝায় না। শুধু বোঝায় একটা মাত্রার ভূমিকম্প আর একটা মাত্রার ভূমিকম্পের কত গুণ বড়।

কিন্তু কত গুণ তা আবার arithmetic scale এ নয়, logarithmic scale এ। উদাহরণস্বরূপ, একটা ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে যে পরিমাণ শক্তি মুক্তি পায়, একটা ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে পায় তার প্রায় ৩২ গুণ, এবং একটা ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩২২, অর্থাৎ ১০২৪ গুণ! বছরে ২-৩ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে লক্ষ লক্ষ, কিন্তু ৭-৮ মাত্রার ঘটে গড়ে একটারও কম।