ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কী আর মিলবে না?

0
195

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চালু থাকা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চিকিৎসকরা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবাটি বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় একদিকে জেলার সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অন্যদিকে রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ জুন থেকে এই হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করেন হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা নির্ধারিত ফির মাধ্যমে অসহায় রোগীদের সেবাদান শুরু করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রোগীদের পাশাপাশি পাশের জেলা হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকেও অনেক রোগী এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতেন। রোগীদের কাছ থেকে ফি: এমবিবিএস-বিডিএস ও সমমানধারী চিকিৎসকসহ চিকিৎসাসেবা সহায়তাকারীর জন্য ২৫ টাকা, সার্ভিস চার্জ ২৫ টাকাসহ মোট ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সহকারী অধ্যাপক ফি: চিকিৎসাসেবায় সহায়তাকারী ৫০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকাসহ মোট ৩০০ টাকা। সহযোগী অধ্যাপক ফি: চিকিৎসা সেবা সহায়তাকারী ৫০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকাসহ মোট ৪০০ টাকা। অধ্যাপক ফি: চিকিৎসক ও সেবা সহায়তাকারী ৫০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকাসহ মোট ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করায় সাধারণ রোগীরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা বিপাকে পড়েন। এতে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সৈয়দ নজরুল ইসলাম নামে এক রোগী জানান, অন্য হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সদর হাসপাতালে এসে তিনি চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবাটি চালু করার দাবি জানান তিনি।

শেখ রাসেল নামে আরেক রোগী বলেন, চিকিৎসকেরা টাকা না পেলে রোগীদের সেবা দেবেন না, এটি স্বাভাবিক। তিনি চলমান সমস্যার সমাধান করে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈকালিক চিকিৎসা সেবাটি চালু করার দাবি জানান।

এদিকে হাসপাতালের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকা প্যাথলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ২১ হাজার ৫৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ৮৬ হাজার ৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৬০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩০ টাকা, নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা ও ডিসেম্বর মাসে ৯০ হাজার ৮১৫ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯১ হাজার ৩৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ হাজার ৯৩০ টাকা রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

জানা গেছে, গত ৮ মাসে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা ১১ হাজার ৩৬০ জন রোগী দেখেছেন। যেখান থেকে আয় হয়েছে ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা। বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর প্রথম মাসে গত বছরের জুন মাসে চিকিৎসকরা ২৫১ জন রোগী, দ্বিতীয় মাস জুলাই মাসে ১ হাজার ২২৬ জন, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৪৫৭ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫২৩ জন, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ২১১জন, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ১৪০ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৮৯২জন রোগী দেখেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৯০৫ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১হাজার ১১৮জন রোগী দেখেছেন।

গত বছরের জুন মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাস রোগীদের সেবা দিয়ে প্রাপ্ত সম্মানী পেয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের এক সভায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা থেকে প্রাপ্ত টাকা চিকিৎসকদের না দেয়ার জন্যে নির্দেশনা দেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের একজন পরিচালক।

সভায় ওই পরিচালক জানান, বাংলাদেশে যেসব সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে, সেখানকার কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের সম্মানী দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সম্মানী উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন, এটা দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, কিছু জটিলতার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ আছে। আমরা সীমিত পরিসরে সেবাটা আবার চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিলতা নিরসন করে পূর্ণাঙ্গভাবে বৈকালিক সেবাটি চালু করতে পারব।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ জুন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। তার যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিতসহ সব বিভাগেই স্বাস্থ্যসেবার বিরাট ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছিল। পাশাপাশি তার সময়ে, হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব জমা হয়েছিল। তার একান্ত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে সকালের পর দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের সব হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার বিবেচনায় প্রথম হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান।