স্কুল থেকে ফিরে পাঁচদিন আগে রান্না করা পাস্তা খান বেলজিয়ামের ২০ বছর বয়সী এক তরুন। এরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাত্র ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান তিনি।
চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদদের দাবি, পাঁচ দিন আগে রান্না করা পাস্তা খাওয়ার কারণেই মৃত্যু হয় তার। ঘটনাটি ২০০৮ সালের। বাসি খাবার খাওয়ার ফলে (চিকিৎসা পরিভাষায়) ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করেন পুষ্টিবিদেরা।
পাস্তার মতো শুধুমাত্র ময়দাজাত খাবার নয়, মাছ, মাংস, সস, স্যুপ, আলু এবং দুগ্ধজাত খাবার থেকেও হতে পারে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। এমনকি বাসি ভাত খেলেও ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পুষ্টিবিদদের মতে, যে ধরনের খাবারে স্টার্চের পরিমাণ বেশি, সে ধরনের খাবারে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। রান্না করার পর তা সঠিক তাপমাত্রায়, সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করলে তার মধ্যে ‘ব্যাসিলাস সেরেয়াস’ নামক ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। সেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে যে রোগ হয়, তা-ই ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’ নামে পরিচিত। এই ব্যাক্টেরিয়ার সহজে ধ্বংস করা যায় না। এমনকি তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলেও তাদের মৃত্যু হয় না। বরং তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে এই ব্যাক্টেরিয়ার।
ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তার প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’ আক্রান্ত হলে তা কী করে বোঝা যাবে, তা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বাসি ভাত দিয়ে তৈরি খাবার থেকে কোনও ভাবে সংক্রামিত হলে ১ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক বার বমি হতে দেখা যায়।
রোগীর শরীরে ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করার পর গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইন ট্র্যাকের ভিতর তা বাসা বেঁধে বিষক্রিয়া শুরু করে। এর ফলে সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অন্ত্রেও। একাধিকবার জলের মতো মলত্যাগ করেন রোগী।
অতিরিক্ত বমি এবং মলত্যাগের কারণে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। ‘ডিহাইড্রেশন’ বা জলের অভাবে শরীর শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পেটের পেশির দ্রুত সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে যন্ত্রণা হতে শুরু করে। সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণাও হতে দেখা যায়।
ব্রাসেলসের ওই তরুণের মধ্যেও অতিরিক্ত বমি, জলের মতো মলত্যাগ, পেটব্যথার উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই পাস্তা খাওয়ার ঘণ্টা দশেক পর অর্থাৎ ভোর ৪টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণের।
তদন্তের পর জানা গিয়েছিল, দিন পাঁচেক আগে রান্না করা ওই পাস্তাটি পড়ে ছিল রান্নাঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক কেথ আর স্কেনেইডার জানান, আগে রান্না করা খাবার বেশিক্ষণ বাইরে ফেলে রাখা যাবে না।
খাবার রান্না করার কিছুক্ষণের মধ্যেই খেয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকেরা। যদি তা না-ও হয়, তা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করে ফ্রিজে রাখতে হবে। খাবার সুরক্ষিত রাখতে হলে কাচের বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করাই ভাল। রান্না করা ভাত ফ্রিজে তোলার আগে দেখে নেওয়া জরুরি যে, তা পুরোপুরি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে কি না।
গরম খাবার সংরক্ষণ করার জন্য সরাসরি ফ্রিজে না ভরাই ভাল। রান্না করার দুঘণ্টার মধ্যে তা ফ্রিজে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এড়ানো যায়।






