বয়স ৫০ পেরোলেই যেসব রোগ জেঁকে বসে

0
74
বয়স পঞ্চাশ পেরোলেই
ছবি: সংগৃহীত

জীবনের পিচে অর্ধশতক কাটিয়ে ফেললে নিজেই নিজেকে একবার পিঠ চাপড়ে দিতে পারেন। পৃথিবীতে বেশ দীর্ঘ সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে আপনার। এ বয়সে হয়তো চনমনে শরীরটা অনেকখানি নিস্তেজ হওয়া শুরু করবে। ঘিরে ধরবে নানা রোগ। সেসব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নিতে হবে বাড়তি পদক্ষেপ।

সত্যি বলতে পঞ্চাশ পেরিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে সতর্ক হতে হবে আরো আগে থেকে। তা না হলে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। এমনটাই বলছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। তার মতে, যে রোগগুলো আমাদের থাকে না পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে সেগুলো আসতে শুরু করে। এ সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেড়ে যায়। আর ডায়াবেটিসে একবার আক্রান্ত হলে সেটা সারে না, দীর্ঘমেয়াদি রোগটি নিয়ে ভুগতেও হয় অনেক। সেজন্য ২০-২২ বছর বয়স থেকেই শরীরের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। পঞ্চাশ পেরোলেই কার্ডিওভাস্কুলার কিছু রোগ দেখা দেয়। কারো হার্টের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। কখনো কখনো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এ সমস্যাও শতভাগ না হলে অনেকখানি প্রতিরোধ করা যায়। নিজের সুরক্ষার জন্য চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে বা পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে।

এ বিশেষজ্ঞ আরো জানান, কিছু রোগ জন্মগত হতে পারে আর কিছু রোগ দেখা দেয় জীবনযাপনের কারণে। পঞ্চাশ বছরের পরে আরেকটি রোগের প্রবণতা বেশি থাকে সেটি হলো সিওপিডি। ধূমপানের ফলে শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে আসে। ধূমপান এড়িয়ে বা দূষণযুক্ত বায়ু এড়িয়ে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। সেজন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অনেক নারীর এ সময়ে পোস্ট মেনোপজাল সিনড্রোমও দেখা যায়।

তিনি যুক্ত করেন, তাছাড়া এ সময়ে সন্তানরা বড় হয়ে যায়। ফলে মা-বাবার একাকিত্ব দেখা দেয়। এখন সামাজিক পরিবেশও আর আগের মতো নেই। ফলে আমরা ঘরের মধ্যে বেশি বদ্ধ থাকি। সেটাও এ বয়সে গিয়ে চাপ ফেলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। তাই নিজের দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতেই হবে। সেটা যেমন শরীরের দিকে, তেমনই দিতে হবে মনের দিকে।

সময়ের সীমারেখা পেরোলেই বেশকিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। এসব থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু বিষয়ে নজর রাখতে হবে। আপনার বয়স যদি হয় ২০-২২ বছর তাহলে এমন সতর্কতা কাজে আসবে আরো বেশি। জেনে নিন পঞ্চাশ পেরোলেই কোন কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। হেলদি এজিং শুনিয়েছে তেমন কিছু রোগের কথা।

উচ্চরক্তচাপ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রক্তনালিগুলোর নমনীয়তা কমতে থাকে। তাতে করে পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতির ওপর চাপ পড়ে। এতেই বোঝা যায় কেন প্রতি তিনজনের দুজন বয়স্ক উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হন। এটি আপনার নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। নিজের ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ধূমপান বন্ধ করুন, মানসিক চাপ কমান, লবণ খাওয়া কমান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।

ডায়াবেটিস: আমেরিকায় প্রতি ১০ জনের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে হার্টের রোগ, কিডনির রোগ, অন্ধত্ব এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই এখন থেকে নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান।

হৃদরোগ: হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে প্লাক তৈরি হওয়াও হৃদরোগের একটি বড় কারণ। এটা শুরু হয় সেই ছোটবেলায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরো খারাপ অবস্থায় যায়। যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ থেকে ৫৯ বছরের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৫ দশমিক ৬ শতাংশ নারীর হৃদরোগ রয়েছে। এবং ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা পুরুষের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশে এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়।

স্থূলতা: যতটা থাকলে আপনাকে সুস্থ বলে বিবেচনা করা যাবে, ওজন তার থেকে বেশি থাকলেই বলা যায় যে আপনি স্থূলতায় আক্রান্ত। এর ফলে ২০টি ক্রনিক রোগ হতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে হার্টের রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ এবং আর্থ্রাইটিস।

অস্টিওপোরোসিস: অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হলে শরীরের হাড় খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তা ভেঙেও যেতে পারে। এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতে খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখতে হবে, সেই সঙ্গে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম যেমন নাচ, জগিং বা সিঁড়ি ওঠানামা করতে হবে।

শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া: ‘‌কী বলছেন?’ এমন প্রশ্নের থেকে আর বেশি কী দিয়ে বোঝানো যাবে যে আপনার বয়স হয়ে গেছে। গবেষণা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫-৫৪ বছর বয়সী নাগরিকদের ২ শতাংশ কম শ্রবণশক্তির কারণে অক্ষমতার মুখে পড়েন। ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মধ্যে সেটা বেড়ে গিয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। উচ্চ শব্দ, জিনগত কারণ এবং বিভিন্ন রোগ এখানে ভূমিকা পালন করতে পারে। তাছাড়া কিছু ওষুধের কারণেও শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। তাই আগের মতো শুনতে না পেলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া দরকার।

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: ছোট কোনো লেবেল দেখতে গেলেও যদি আবছা হয়ে যাওয়ার কারণে দেখতে অসুবিধা হয় তাহলে বলতে হবে বয়সের কারণে দৃষ্টিশক্তির সমস্যার ঝুঁকিতে পড়েছেন আপনি। ক্যাটার‍্যাক্ট বা গ্লকোমার কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তাই নিয়মিত চোখের ডাক্তার দেখানোও দরকার।

ব্লাডারে সমস্যা: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাডারে সমস্যা দেখা দেয়। স্নায়ুর সমস্যা, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়া এবং টিস্যু ঘন হয়ে যাওয়া এবং বেড়ে যাওয়া প্রস্টেটের কারণে এমন সমস্যা দেখা দেয়। ব্যায়াম এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন, কম কম ক্যাফেইন পান করা এবং ভারী কোনো কিছু না তোলার মাধ্যমে এ সমস্যা এড়ানো যায়।

ক্যান্সার: ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সবচেযে বড় রিস্ক ফ্যাক্টরের নাম বয়স। এ রোগে তরুণরাও আক্রান্ত হয়, কিন্তু ৪৫ থেকে ৫৪ বছরের দিকে সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। নিজের বয়স বা জিনকে তো আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কিন্তু ধূমপান বা রোদে অনেক বেশি সময় থাকার মতো বিষয়গুলো নিশ্চয়ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

বিষণ্নতা: বয়সকালে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়ে যায়, প্রিয়জনেরা হারিয়ে যায় বা দূরে সরে যায় এবং জীবনের আরো বেশকিছু পরিবর্তন ঘটে। তাতেই বিষণ্নতা গ্রাস করে।

কোমর ব্যথা: বয়স যত বাড়ে এ সমস্যাটাও তত বেশি ঘিরে ধরে। বেশকিছু কারণে এ সমস্যার মুখে পড়ে মানুষ। বেশি ওজন, ধূমপান, যথেষ্ট ব্যায়াম না করা, আর্থ্রাইটিস বা ক্যান্সারের কারণে অনেক সময় কোমর ব্যথা হয় বেশি। তাই কোমর আগে থেকেই শক্তিশালী রাখার পদক্ষেপ নিন। কারণ একসময় সেটা খুব দরকার পড়বে।