বিশ্বে বয়স্ক মানুষদের আর্থ্রাইটিস বা বাত-ব্যথায় ভোগা অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ষাটোর্র্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশ আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। রোগটিতে পুরুষদের তুলনায় নারীদের আক্রান্তের হার বেশি। রোগটির চিকিৎসায় দেশে মাত্র ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। প্রবীণদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আর্থ্রাইটিসের ব্যাপকতা নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে অভিমত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রোগটির ব্যাপকতা বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে বলে তারা জানান।
এমন প্রেক্ষাপটে আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন দেশের মতো আজ বাংলাদেশে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘দেরি নয়, সংযুক্ত থাকুন, আর্থ্রাইটিস চিকিৎসার এখনই সময় (ডোন্ট ডিলে, কানেক্ট টুডে, টাইম টু ওয়ার্ক)’। এদিকে এ বছর দিবসটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে বিএসএমএমইউ ও বাংলাদেশে রিউমাটোলজি সোসাইটির উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। এরমধ্যে বেলা সাড়ে ১১টায় বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিক এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের উদ্যোগে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাত ব্যথায় ভোগা রোগের প্রকোপ সম্পর্কে দুপুর পৌনে ১২টায় বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিলন হলে বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে সম্প্রতি আর্থ্রাইটিস নিয়ে গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণা দলের প্রধান ডা. মঈনুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলের বয়স্ক মানুষদের বাত-ব্যথার ব্যাপকতা জানতে তারা গবেষণা করেছেন। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গবেষণা করা হয়। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ৩৮০ জন প্রবীণের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে গবেষণা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়-গ্রামাঞ্চলের ৬০ বছরের ঊর্র্ধ্বে ৫২ শতাংশ মানুষ আর্থ্রাইটিস বা বাত-ব্যথায় ভুগছেন। যাদের অর্ধেকেরও বেশি মাঝারিমাত্রায় শারীরিকভাবে অক্ষম। পুরুষদের (৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ) মধ্যে সমস্যাটি বেশি। এছাড়া বাত-ব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশের কোমর ব্যথা ও ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশের হাঁটুতে বেশি ব্যথার তথ্য পাওয়া যায়। বাত-ব্যথায় ভোগা বয়স্কদের মধ্যে ৪ শতাংশের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং ৪ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ফ্রোজেন শোল্ডারে ভুগছেন।
এ গবেষণার উপদেষ্টা ও বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগ হতে পারে। আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন আটল্যান্টার তথ্য অনুযায়ী-বর্তমানে মানুষের অক্ষমতার প্রথম ও প্রধান কারণ হলো আর্থ্রাইটিস। বাংলাদেশে প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের জটিল বাতরোগে ভুগছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিমাত্র রিউমাটোলজি বিভাগ চালু আছে। রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন রিউমাটোলজিস্ট (এমডি কোর্স সম্পন্ন চিকিৎসক) রয়েছেন।
বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ বলেন, আর্থ্রাইটিস বলতে সাধারণত গিরায় ক্ষত বা প্রদাহ বোঝায়, যা সন্ধিবাত নামেও পরিচিত। তবে আর্থ্রাইটিস একক রোগ নয়। এটি অনেকগুলো রোগের প্রধান লক্ষণ। রোগটি অনেক ধরনের হতে পারে। ২০১৩ সাল ও ২০১৬ সালে দুটি গবেষণায় দেখা যায়-মানুষের শরীরে একশর বেশি ধরনের আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগটির প্রদাহের কারণভেদে এটি অল্প সময়ে হলে সেটিকে একিউট আর্থ্রাইটিস বলে। কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গি ভাইরাসের কারণেও বাত রোগ হতে পারে। এছাড়া রিউমাটয়েল আর্থ্রাইটিস, স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিস হয়। হাড়ক্ষয় ও বৃদ্ধির কারণে অস্টিও আর্থ্রাইটিস হয়।
বিএসএসএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী বলেন, রিউমাটয়েট আর্থ্রাইটিস, স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিসসহ ১২০টি বড় ধরনের রোগসহ প্রায় সাতশ রোগের সমন্বয় হলো আর্থ্রাইটিস। বাংলাদেশের ২৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের আর্র্থ্রাইটিস বা বাত-ব্যথায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ২৪ শতাংশের কর্মক্ষমতা কম। এসব রোগীর জন্য বিএসএমএমইউতে রিউমাটোলজি বা বাত-ব্যথা সংক্রান্ত বিভাগ রয়েছে। এছাড়া রিউমাটোলজি সোসাইটির সদস্যরা বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালেও সেবা দিচ্ছেন। রোগটির চিকিৎসার কলেবর বাড়াতে সরকার দেশের আটটি পুরাতন মেডিকেল কলেজে রিউমাটোলজি বিভাগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে রিউমাটোলজির ওপর ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ও এফসিপিএস ডিগ্রি চালু আছে।






