স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বলতে সেই ধরনের খাদ্যাভ্যাসকে বোঝায় যা সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বা স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্য শক্তির যোগান দেয়।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুব একটা সহজ কোন বিষয় নয়। সারাদিনে নানান ধরনের কাজের ব্যস্ততায় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার ফলে সঠিকভাবে খাদ্যাভ্যাস অনেকেই মেনে চলতে পারেন না।
তবে কিছু নিয়ম মেনে চললেই সহজে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা যায়। সকলের সুবিধার্থে কিছু সহজ নিয়ম জানানো হলো।
১. ধীরে ধীরে খান
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের শুরুটা হয় আপনি কতটা সময় নিয়ে খাচ্ছেন। মূলত খাওয়ার গতির সাথে আপনি কি পরিমাণ খাচ্ছেন আর কতটা ওজন বাড়ছে তা সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তাই সবসময় ধীরে ধীরে খাওয়া অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে দ্রুত যারা খায় তাদের বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং অন্যান্যদের বেশি ওজন হয়ে থাকে।
২. প্রোটিন খাওয়া বৃদ্ধি করুন
প্রোটিনকে পুষ্টির রাজা বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ঘেরলিন নামক হরমোনের মাত্রা কমে যায় যা ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া প্রোটিন পেশীর ভর ধরে রাখার পাশাপাশি ক্যালোরি বার্নের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই নিয়মিত খাবারে দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, ডিম, মটরশুটি, চর্বিহীন মাংস রাখা উচিত।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান ওজন কমানোর পাশাপাশি ক্যালোরি বার্ন তরান্বিত করতে পারে। এ ছাড়া খাবারের আগে কিছুটা পানি পান ক্ষুধা কমায় এবং অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে পর্যাপ্ত পানি পান আবশ্যক।
৪. গ্রিল বা ভাজার পরিবর্তে বেক করুন
আমরা বাঙালিরা সাধারণত মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার গ্রিল বা ভেজে খেতে পছন্দ করি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে রান্নার সময় খাবারে পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস নামক যৌগ গঠিত হয় যা ক্যান্সার এবং হৃদরোগসহ বিভিন্ন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির তৈরি করে। তাই ভাঁজাপোড়ার পরিবর্তে সিদ্ধ, আধাসিদ্ধ, বেক, শিমারিং বা ব্রোলিং পদ্ধতিতে রান্নার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। এতে করে খাবারের সব পুষ্টি উপাদান বজায় থাকে।
৫. ওমেগা-৩ এবং ভিটামিন ডি খান
হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অবশ্যই ওমেগা-৩ এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখতে হবে। এই উপাদানগুলো প্রদাহ কমানো, হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে থাকে। তাই দুধ, সামুদ্রিক মাছ বা চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক খাবার খাওয়া উচিত।
৬. গোটা ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন
ফল সাধারণত মিনারেল, ফাইবার, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে। তাই ফলের জুস করে খাওয়ার চেয়ে গোটা ফল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এতে স্বাস্থ্যকর উপাদান বেশি পাওয়া যায়।
৭. বাড়িতে রান্না করুন
বেশির ভাগ বাইরে না খেয়ে ঘরে রান্না করার অভ্যাস তৈরি করার চেষ্টা করুন। এটা যেমন স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস তৈরি করবে তেমনি বাজেটেও সহায়তা করবে। এ ছাড়া খাবারে অস্বাস্থ্যকর কিছু আছে কিনা তা নিয়েও চিন্তার কিছু থাকবে না।
৮. ড্রিংকসের বদলে পানীয় খান
বিভিন্ন রকমের ড্রিংকসের কারণে হৃদরোগ, স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এসবের বদলে লেবুর শরবত বা স্পার্ক্লিং ওয়াটার বা ডিটক্স ওয়াটার পান করতে পারেন।
৯. স্বাস্থ্যকর তেল নির্বাচন করুন
গত কয়েক দশক ধরে উচ্চ প্রক্রিয়াজাত বীজ এবং উদ্ভিজ্জ তেল পরিচিত হয়ে উঠেছে। যেমন সয়াবিন, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি। পুষ্টিবিদদের মতে এসব তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি তবে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ কম। তাই খাবার রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ তেল, অ্যাভোকাডো তেল বা নারকেল তেল ব্যবহারে জোর বেশি দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।
১০. খাদ্য তালিকায় দই রাখুন
দই প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস যা পেট ভালো রাখতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় দই রাখা উচিত। বিশেষ করে টক দই এ কার্বোহাইড্রেট এবং ল্যাকটোজ কম থাকে বিধায় এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে খাদ্য গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে।






