স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ পরবর্তী জটিলতা, সমাধান ও সচেতনতা

0
392

মাসিক বা ঋতুস্রাব নারী দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একটা নির্দিষ্ট বয়সের (৪৫ থেকে ৫৫ বছর) পর ঋতুচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। একেই মেনোপজ বলে। যদি কারো ১২ মাসের বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব /মাসিক বন্ধ থাকে তাহলেই ধরে নিতে হবে এটি মেনোপজ।

আমাদের দেশে সাধারণত নারীদের বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে পৌঁছালেই মেনোপজ হয়ে থাকে। এ সময় মেজাজ খিটখিটে, ওজন বৃদ্ধিসহ ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে একটা বয়সের পর এই ধরনের পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। পুষ্টিবিদদের মতে, এই প্রক্রিয়া সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন আগে থেকেই সচেতনতা।

মেনোপজের লক্ষণ
নারীভেদে মেনোপজের লক্ষণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আবার সব লক্ষণ সবার প্রকাশ নাও পেতে পারে। লক্ষণগুলো হলো:

১. যৌন আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা যৌন ইচ্ছা না থাকা। যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

২. প্রস্রাবে নিয়ন্ত্রণ না থাকা। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং মূত্রনালির সংক্রমণ।

৩. শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় শরীরে ঘাম হওয়া।

৪. ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া।

৫. ত্বক, মুখ এবং চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া। ত্বকে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়া।

৬. ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে নারীদের হাড় ও হৃদপিণ্ডের উপরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পরে।

৭. ডিপ্রেশন বা মুড সুইং হয় ও অবসাদ দেখা দেয়।

মেনোপজের সমাধান ও সচেতনতা

১. চুল এবং ত্বকের যত্ন নেয়া
বয়স ৩০-এর কোঠায় পৌঁছনোর পর থেকেই চুল এবং ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। মাসিক বন্ধের পর থেকেই ত্বক এবং চুল অস্বাভাবিক হারে শুষ্ক হতে শুরু করে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি চুলে রাসায়নিক প্রসাধনীর ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা।

এ ছাড়া কোলাজেনের মাত্রা হঠাৎ করে কমতে থাকায় ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। নিয়মিত ত্বকচর্চার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। পাকা পেঁপে, ভিটামিন সি জাতীয় ফল, সামুদ্রিক মাছ, বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়া উচিত, এতে ত্বক অনেকটাই সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকে।

২. পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন
স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। রাত জেগে কাজ করা, বই পড়া, সিনেমা বা সিরিজ় দেখার অভ্যাস যত কমানো যায়, তত ভাল। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমোনোর পাশাপাশি, ঘুম থেকে ওঠা এবং ঘুমোতে যাওয়ার সময়কে একটি রুটিনে বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করুন।

৩. যৌনাঙ্গের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা
মাসিক বন্ধের পর যৌনাঙ্গ এবং এর আশেপাশের অঞ্চল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফলে বাড়তে পারে সংক্রমণ। সঙ্গমেও অনীহা জন্মানোও অস্বাভাবিক নয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনেকেই বাইরে থেকে ইস্ট্রোজেন দেওয়া ক্রিম ব্যবহার করেন। তাই নিয়মিত যৌনাঙ্গ পরিস্কার রাখা জরুরি।

৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস জরুরি
এ সময়ে ব্যালেন্সড ডায়েট বা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। আর চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়াই শ্রেয়। এ ছাড়া হৃৎপিণ্ড ও হাড়কে সুরক্ষা দিতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন, এ সময়ে চিকিৎসার পাশাপাশি মিষ্টি বা প্রক্রিয়াজাত খাবারে কিন্তু লাগাম টানতে হবে। প্রতিদিন খাবারে রাখতে হবে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার।

৫. মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা
মাসিক বন্ধের আগে এবং পরে হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন বেশির ভাগ মহিলা। এই সমস্যার প্রধান কারণ রক্তে শর্করার ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া। মাসিক বন্ধের সময় কে কোন সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তা অনেকটাই নির্ভর করে এই শর্করার মাত্রার উপর। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম, শরীরচর্চা, ধ্যান করতে পারলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
মাসিক বন্ধের সময়ে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে বেশির ভাগ মহিলারই ওজন বেড়ে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা এর জন্য দায়ী হলেও আরও নানা কারণ এ ক্ষেত্রে রয়েছে। তাই এই সময় থেকেই শরীরচর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

৭. পরিবারের সচেতনতা ও সহযোগিতা
এ সময়ে স্বামী এবং পরিবারের সহযোগিতা খুবই জরুরি। স্বামী যদি স্ত্রীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা বুঝে তাকে সাহায্য করেন, তাহলে মানসিক অস্থিরতা কিছুটা কম হয়। সারাদিন পর একসঙ্গে গল্প করা বা পছন্দের জায়গায় ঘুরতে যাওয়া- এ ধরনের মানসিক পরিস্থিতিতে খুবই কার্যকর। সেই সাথে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং রেগ্যুলার চেকআপ-এ থাকাটাও জরুরী।