টাইফয়েড জ্বর হল এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়াঘটিত রোগ, যা স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়। এ রোগের লক্ষণ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে, সচরাচর জীবাণু প্রবেশের ৬-৩০ দিন পর লক্ষণগুলি দেখা যায়। প্রায়ই কয়েকদিনের ব্যবধানে জ্বরের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়াও দুর্বলতা, পেট ব্যথা, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, মাথা ব্যথা সচরাচর হতে দেখা যায়।
সালমোনেলা টাইফি নামক এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়া, যা অন্ত্র ও রক্তে বৃদ্ধি পায় তখন এই জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং উপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। এর কারণে পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ, অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ, মস্তিষ্কে প্রদাহ, পিত্তথলিতে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোড়া, স্নায়বিক সমস্যা এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দেখে নিতে পারেন টাইফয়েড জ্বরে ঘরোয়া সেবা দেয়ার উপায়-
১. প্রচুর পানি পান: টাইফয়েড হলে যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণে পানি খেতে হবে। অবশ্য শুধু পানি নয়, এরসঙ্গে যেকোনও তরল খাবার খেতে পারেন। ফলের রস, হার্বাল চা-ও থাকতে পারে তালিকায়। টাইফয়েড থেকে ডাইরিয়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তা যাতে না হয় তাই তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যেকোনও ফলের রস এক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে। তরল যত বেশি শরীরে ঢুকবে, শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে। ফলে শরীর সুস্থ হবে তত তাড়াতাড়ি।
২. আদা: শরীরের যে কোনও রকম সমস্যায় আদা সবচেয়ে উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। কিডনি থেকে অযাচিত পদার্থ বের করে দিতেও সাহায্য করে আদা। ফলে শরীর পরিষ্কার হয়। সবচেয়ে উপকারী কাঁচা আদা বা অর্ধেক রান্না করা আদা। এতে গুণাগুণ বেশি থাকে। তাই টাইফয়েডের সময় আদা যত শরীরে ঢুকবে, তত ভাল।
৩. তুলসীপাতা: অনেক রোগের ওষুধ তুলসী। টাইফয়েডের জন্য এটি খুব সাধারণ ঘরোয়া ওষুধ। অনেক আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতেও কাজে লাগে তুলসী। টাইফয়েডেও এই পথ্য যথেষ্ট উপকারী। গরম পানিতে প্রথমে তুলসী পাতা হালকা করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এতে বাইরের ধুলো চলে যাবে। তারপর অল্প মধু বা আদার রস বা গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে তুলসী পাতা খাওয়া যেতে পারে। টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে খুব সাহায্য করে তুলসী।
৪. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: এতে প্রচুর অ্যাসিডিক উপাদান থাকে। জ্বর কমাতে সাহায্য করে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। দেহ থেকে উত্তাপ বের করে এটি। টাইফয়েড মানেই জ্বর একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে বেশি জ্বর হলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দেয়া যেতে পারে। ডাইরিয়াকেও আটকায় এই ঘরোয়া টোটকা। দেহের পুষ্টি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
৫. ঠান্ডা পানির জলপট্টি: জ্বর বেশি হলে ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মাথায় দিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ বেশি বেশি করে জলপট্টি দিতে হবে। দেহের তাপমাত্রা আরও বেড়ে গেলে অবশ্য এতে আর কাজ হয় না। তখন ঠান্ডা পানিতে মাথা ধুয়ে দিতে হবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে সারা গা মুছিয়ে দেয়া যেতে পারে। এতে জ্বর খুব তাড়াতাড়ি নেমে যায়।
৬, ফলের শরবত: বিভিন্ন ফলের রস এসময় খাওয়াতে হবে। দেশি ফলের শরবত খাওয়াতে পারলে বেশি ভালো। লেবু, কমলা, মাল্টা, ড্রাগন এগুলো জুস করে রোগীকে দিতে পারেন।