রাজধানী ঢাকায় যেভাবে বায়ুদূষণ বাড়ছে তাতে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমাণ পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঘোষণা দিয়েছে, বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। কেননা বায়ুদূষণ মানেই দেশে বাড়তে শুরু করবে ফুসফুসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
দূষণের পাঁচটি ধরন হিসেবে ধরা হয় বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। এর ওপর ভিত্তি করে একিউআই নির্ধারণ করা হয়। আর তা থেকেই জানা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকাবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। যারমধ্যে প্রথমেই বলা যায়, ফুসফুসের ক্যানসারের কথা।
ফুসফুসের ক্যানসার একটি নীরব ঘাতক। প্রাণঘাতী এ অসুখের লক্ষণ বা উপসর্গ না জানা থাকলে কখনই ক্যানসারের প্রথম পর্যায়ে আপনি এ মরণব্যাধিকে শনাক্ত করতে পারবেন না। তাই আসুন সঠিক সময়ে ফুসফুসে ক্যানসারকে শনাক্ত করতে এ রোগের উপসর্গগুলো জেনে নিই-
ফুসফুসের ক্যানসারের রয়েছে চারটি পর্যায়
চিকিৎসকরা ফুসফুসের ক্যানসারকে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। ক্যানসার শুরুর একেবারে প্রথম পর্যায়ে এই রোগ শুধু ফুসফুসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে এই রোগ ফুসফুসসহ এর নিকটবর্তী স্থান লিম্ফ নোডেও পৌঁছে যায়। এতে রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে।
ফুসফুসের ক্যানসারের তৃতীয় পর্যায়ে এই মরণব্যাধি ফুসফুস, লিম্ফ নোড ছাড়িয়ে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন এই ক্যানসার যদি দেহের একপাশেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে এই অবস্থাকে ক্যানসারের তৃতীয় স্টেজ ধরা হয়।
কিন্তু তা যদি শরীরের অন্যান্য গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়ে তবে তা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার একেবারে শেষ পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই স্টেজে একজন চিকিৎসকের আর কিছুই করার থাকে না।
ফুসফুসের ক্যানসারে লক্ষণ
ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হলে রোগীর মধ্যে যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে একটি হলো একটানা কাশি। এই কাশি যদি কোনো কারণ ছাড়াই সারা বছর লেগে থাকে তবে এই উপসর্গ ফুসফুসের ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এ ছাড়া কাশি দেয়ার সময় ব্যথা অনুভব হওয়া, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কাশির সঙ্গে কফ থাকা, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, পিঠ ও কাঁধের আশপাশে ব্যথা অনুভব করা, শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে গলার স্বর ভঙ্গ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছে তামাকের সঙ্গে ফুসফুসের ক্যানসারের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
এ ছাড়া পরিবেশ ও বায়ুদূষণ, চিকিৎসা ক্ষেত্রে রেডিয়েশনের ব্যবহার কিংবা যারা পেশাগত কারণে অ্যাসবেসটস ও বিভিন্ন কারসিনোজেনিক বস্তু অসাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করেন তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
যেহেতু ফুসফুসের ক্যানসারের কোনো প্রতিষেধক টিকা নেই তাই এই মরণব্যাধিকে জয় করতে এর প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপরই আমাদের বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন। ফুসফুসের ক্যানসার থেকে দূরে থাকতে ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। নিয়মিত বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। বাড়িতে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে ব্যবহার করতে পারে এয়ার পিউরিফায়ার।