হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ একটি ভাইরাল ইনফেকশন যেটি সাধারণত শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। এটি সাধারণত গুরুতর রোগ না হলেও অতি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ এবং ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি বলে জানা গেছে।
সাধারণত গ্রীষ্ম এবং শরতের শুরুতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ কী এবং কারণ?
শিশুদের র্যাশযুক্ত অসুখগুলোর মধ্যে এই রোগটি অন্যতম একটি রোগ। কক্সেকি নামের এক ধরনের ভাইরাসের কারণে মূলত এ রোগ হয়। এ ছাড়া অন্যান্য ধরনের এন্টারোভাইরাস থেকেও হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ হতে পারে।
এতে আক্রান্ত শিশুর নাকের পানি, লালা, ফোসকা ফাটা পানি, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে, এমনকি আক্রান্ত শিশুর পায়খানার মাধ্যমেও অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। এ ছাড়া আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে আসলেও এই রোগে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ভাইরাসটি শিশুর শরীরে প্রবেশের চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা যায়।
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজের লক্ষণ
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজে আক্রান্ত শিশুর মধ্যে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়,
জ্বর
গলা ব্যথা
মাথা ব্যথা
অসুস্থবোধ করা
জিহবা, মাড়ি এবং গালের ভিতরে ব্যথাযুক্ত ফোস্কার মত র্যাশ বা ক্ষত।
হাতের তালুতে, তলপেটে এবং কখনও কখনও নিতম্বে ফুসকুড়ি। ত্বকের রঙের উপর নির্ভর করে, ফুসকুড়ি লাল, সাদা, ধূসর হয়ে থাকে।
শিশুর মধ্যে অস্থিরতা
ক্ষুধামন্দা
কখন চিকিৎসক দেখাতে হবে?
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজের প্রধান ঝুঁকির কারণ হল বয়স। এই রোগটি বেশিরভাগই ৫ থেকে ৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রভাবিত করে।
এটি গুরুতর রোগ না এবং সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজেই ভাল হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্নক আকার ধারণ করতে পারে। শিশুর মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
১. শিশু স্বাভাবিকভাবে পানি বা তরল পান করতে পারে না এবং ডিহাইড্রেটেড হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
২. শিশুর জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
৩. ১০ দিন পরেও রোগের লক্ষণ বা রোগ না কমলে।
৪. শিশু দূর্বল হয়ে গেলে।
৫. শিশু খুব ছোট হলে বিশেষ করে ৬ মাসের কম বয়সী হলে লক্ষণগুলো গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজের প্রতিকার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগে সংক্রমণের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই নিরাময় হলেও ফুসকুড়ি বা জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন অনেকেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধই ব্যবহার করা উচিত না।
১. সাধারণত ফোস্কা বা ফুসকুড়ি কমাতে ওভার-দ্য-কাউন্টার টপিকাল মলম দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা কমাতে ওষুধ, যেমন অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেন দেয়া হয়।
৩. বেদনাদায়ক গলা ব্যথা কমাতে ওষুধযুক্ত সিরাপ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ঘরোয়া প্রতিকার
কিছু কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ও এই রোগের উপসর্গ থেকে মুক্তি দিতে পারে। যেমন,
১. ফলযুক্ত আইসচিপস বা পপসিকলস দেয়া যেতে পারে। এতে করে মুখে ঘায়ের জ্বালাপোড়া কমবে।
২. আইসক্রিম বা শরবত খাওয়া
৩. ঠান্ডা পানীয় পান করা
৪. সাইট্রাস ফল, ফলের পানীয় এবং সোডা সীমিত পরিমাণ পান করা।
৫. অতিরিক্ত মশলাদার বা নোনতা খাবার না খাওয়া।
৬. উষ্ণ গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে তা গার্গল করা বা কুলি করা। এতে করে মুখের ফোসকা এবং গলা ঘায়ের ব্যথা উপশম হবে। এটি দিনে কয়েকবার বা যতবার প্রয়োজন ততবার করা যায়।
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজের প্রতিরোধ
অনেক উপায়ে শিশুর হ্যান্ড-ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগের ঝুঁকি কমানো যায়,
১. নিয়মিত হাত ধোয়া
কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে আপনার হাত ধুয়ে নিন। টয়লেট ব্যবহার করার পরে বা ডায়াপার পরিবর্তন করার পরে আপনার হাত ধুতে ভুলবেন না। এছাড়াও, খাবার তৈরি বা খাওয়ার আগে এবং আপনার নাক ফুঁকানোর পরে, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার পরে আপনার হাত ধুয়ে নিন।
২. ভালো স্বাস্থ্যবিধি শেখান
নিয়মিত হাত ধোঁয়া এবং এর সুফলতা সম্পর্কে শিশুদের সব সময় শেখাতে হবে। তাদের শেখাতে হবে সব সময় পরিচ্ছন্ন কীভাবে থাকা যায়।
৩. বাসা-বাড়ি জীবাণুমুক্ত রাখুন
আপনার বাসা এবং শিশুর থাকার স্থান সম সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখা উচিত। এমনকি শিশু যেসব জিনিস ধরে খেলে বা হাটে সেগুলো ও জীবাণুমুক্ত রাখুন।
৪. আক্রান্তদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
যেহেতু এই রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গ থাকাকালীন তাদের সংস্পর্শে নিজে না যাওয়া বা শিশুকে যেতে না দেয়াই শ্রেয় হবে। এ ছাড়া আক্রান্ত শিশুদের তাদের চাইল্ড কেয়ার হোম বা স্কুল থেকে দূরে রাখুন।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, হেলথ লাইন