কফি কি ঘুমের ঘাটতি পুষিয়ে দেয়? কী বলছে গবেষণা

0
220

বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, ঘুমের অভাব হলে মানুষের মনোযোগ বজায় রাখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এ নিয়ে রয়েছে একটি এক্সপেরিমেন্টও! এখানে ঘুমের ঘাটতি রয়েছে এরকম কিছু মানুষকে কম্পিউটারে একটি লাল বিন্দুকে নিরীক্ষণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কাজটি ছিল খুবই সহজ। যখনই স্ক্রিনে লাল বিন্দুটি দেখা যাবে, তখনই তাদের বোতাম প্রেস করতে হবে। দেখা যায়, বিন্দুটি দেখতে পারলেও বোতাম প্রেস করতে তারা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি সময় নিয়েছিলেন। মনোযোগের এই ত্রুটিগুলো ঘুমের চাপ বৃদ্ধির কারণে হয়। কিন্তু চাপ হ্রাসের কোনো সমাধান আছে কি?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক কিম্বারলি ফেন ঘুমের ঘাটতি নিয়ে এক গবেষণা করেন। এ গবেষণাটিতে তাকে সাহায্য করেছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্লিপ এন্ড লার্নিং’ ল্যাবের শিক্ষার্থীরা। তারা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছেন ঘুমের ঘাটতির ফলে মানবদেহে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা দূরীকরণে কী কী করা যেতে পারে। আদৌ কফি কি ঘুমের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে নাকি পাওয়ার ন্যাপ বেশি কার্যকরী, এসব উত্তরই মূলত তারা খুঁজে বের করতে চেয়েছেন গবেষণাটির মাধ্যমে।

 

আমাদের নিত্যদিনের কাজগুলো সঠিকভাবে সমাপ্ত করতে চাইলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। দীর্ঘ একটা দিন পার করার পর যে ক্লান্তি চেপে বসে তা কাটাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার ঘুমই যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের ব্যস্ত জীবন- শিডিউলে ঘুমের জন্য ৭ ঘণ্টার স্লট খুঁজে বের করাই কঠিন হয়ে পড়ে অনেক সময়। ফলে ঘুমের ঘাটতি দেখা যায়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আমাদের শরীর ঠিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অনেক সময়। এর প্রভাব পড়ে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও।

অনেকে তাই টানা ঘুমের বদলে বেছে নেন পাওয়ার ন্যাপ। ন্যাপকে ঝটিকা নিদ্রাও বলা যায়। কেননা ঘুমের চেয়ে ন্যাপের সময়কালটা হয় কম। আবার, অনেকে ক্যাফেইনে আশ্রয় খুঁজে নেয়। ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে পুনরায় কাজ করার শক্তি খুঁজে পেতে এ পন্থাগুলোই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ব্যস্ত নাগরিকদের মাঝে।

কিন্তু গবেষণা বলছে, ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।

ফেনের গবেষণা যা বলছে

ঘুমের ঘাটতি শুধু মানুষের মনোযোগ না, তাদের কগনিটিভ একটিভিটিতেও ব্যাঘাত ঘটায়। কগনিটিভ একটিভিটি বলতে স্মৃতি, বুদ্ধিমত্তা, সাধারণ জ্ঞান, হিসাব করার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কোনো জটিল কাজ করা। যেমন ধরুন আপনি একটি কেক তৈরি করছেন। এখানে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। কোনো একটি ধাপ বাদ পড়ে গেলে ঠিকঠাকভাবে আর কেকটা তৈরি হবে না। অর্থাৎ, এটা এক ধরনের জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া। তাই কিম্বারলি ফেন ও তার টিম দুই দল মানুষকে নিয়ে একটি পরীক্ষা করে।

এখানে প্রথম দিনে অংশগ্রহণকারীদের কিছু কগনিটিভ টাস্ক করতে দেয়া হয়। তারপর একদলকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম করতে বলা হয়। অন্য দলকে ল্যাবে সারা রাত জেগে থাকতে বলা হয়। দ্বিতীয় দিন, যেসব অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তারা সকালে ফিরে আসে। প্রত্যেকে পুনরায় কগনিটিভ টাস্কগুলো সম্পন্ন করে।

যারা সারা রাত কম ঘুমিয়ে বা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিল এবার তাদের প্রশ্ন করা হয় যে জেগে থাকতে তারা কী করেছিল। জানা যায়, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী এনার্জি ড্রিংক ও কফি খেয়েই রাত পার করেছিল। কিন্তু মজার বিষয় হলো, সারা রাত জেগে থেকেও যারা ক্যাফেইন গ্রহণ করেছিল তাদের কর্মক্ষমতা পর্যাপ্ত ঘুমানো অংশগ্রহণকারীদের মতোই ছিল। যারা ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিল ক্যাফেইন তাদেরও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কগনিটিভ টাস্কগুলো সঠিকভাবে সমাধান করতে সাহায্য করেনি।

অর্থাৎ, কফি আপনাকে কোনো রকম চলার মতো শক্তির জোগান দিলেও জটিল শারীরিক ক্রিয়া ও জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া সমাধানে মোটেও সাহায্য করবে না। অর্থাৎ, কফি খেয়ে আপনি ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে হয়তো পারবেন কিন্তু গণিতের পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে পারবেন না।

তাহলে পাওয়ার ন্যাপ কি কমায় ঘুমের ঘাটতি?

আমরা অনেক সময় দিনের বেলা আধা ঘণ্টার একটা ঝটিকা ন্যাপ নিয়ে থাকি। এটা আমাদের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে। তাই এটাও ভাবা যৌক্তিক যে রাতে ঘুমানোর একই রকম প্রভাব থাকবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার ঘুম আসলে কোনো কাজে আসে না। অংশগ্রহণকারীরা যারা ঘুমিয়েছিলেন, তারা সারা রাত জেগে থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় সাধারণ মনোযোগের কাজ বা আরও জটিল প্লেসকিপিং কাজগুলোতে ভালো করতে পারেননি।

অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঝটিকা ঘুমের চাইতে ক্যাফেইন বেশি কার্যকরী। যদিও ক্যাফেইন সম্ভবত জটিল চিন্তার প্রয়োজন এমন কাজগুলোতে আপনাকে সাহায্য করবে না।

সংক্ষেপে, পর্যাপ্ত ঘুম আপনার মন ও মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য এবং ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।