ডেঙ্গুর গ্রাম ভ্রমণ, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে ৬ কোটি মানুষ

0
418
ছবি: সংগৃহীত

বছরের শুরুতে ডেঙ্গু চোখ রাঙানো শুরু করলেও ফেব্রুয়ারি থেকে তা কমতে থাকে। তবে মে থেকে ফের বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা; জুলাইয়ে যা লাগামহীন। ডেঙ্গু শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের আট জেলার মোট পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৪১ মানুষ।

মশক নিধন কার্যক্রম, ক্রাশ প্রোগ্রামসহ সিটি কর্পোরেশনগুলোর নানা উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ছে। এ বছরের প্রতি মাসে যে পরিমাণ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এখন প্রতিদিনই ভাঙছে আগের রেকর্ড। ২০১৯-এর পর এ বছর দেশের ৬৪টি জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। তবে ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে ঢাকা মহানগরীসহ আট জেলা। মাঠ পর্যায়েও এসব জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব ঢাকার মতোই বেশি। ঢাকার পর যেসব জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চট্টগ্রাম ও বরিশালের। ফরিদপুর ও গাজীপুরে প্রতিদিন আক্রান্তের যে সংখ্যা বাড়ছে, তাও আশঙ্কাজনক।

ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, গাজীপুর, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৪১ মানুষ বর্তমানে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার প্রায় ৯২ শতাংশই এ আট জেলার।

আগের বছরগুলোতে ঢাকা মহানগরী উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় থাকলেও এবার জেলা শহরগুলো যুক্ত হওয়াকে অশনি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। লাগামহীন পরিস্থিতির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি রয়েছে মশা নির্মূলে কার্যকর উদ্যোগ না থাকাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ডেঙ্গু হলে জ্বরের মাত্রা তীব্র থাকছে। এর সঙ্গে ডায়রিয়া, বমি, তীব্র মাথাব্যথা ও পেটব্যথা – এসব লক্ষণ নিয়ে আসছে রোগীরা। এর পাশাপাশি কিছু মানুষ ডেঙ্গুর এমন সিনড্রোম যেমন – নাকসহ শরীরের বিভিন্ন দিক দিয়ে রক্তক্ষরণের ইতিহাস নিয়ে আসছেন।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাহাদাৎ হোসেন বলেন, টেম্পারেচার যখন বেশি থাকে, তখন এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। যখন থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ে তখন গরম বেড়ে যাওয়ায় প্রজনন বেড়ে লার্ভা প্রচুর হয়। তখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই মাস পর্যন্ত এত রোগী আর কখনও আক্রান্ত হয়নি। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পরিমাণও এত ছিল না। এর মধ্যেই বড় শঙ্কার তথ্য দিচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা। তাদের প্রতিবেদন বলছে, জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ছড়ালেও ডেঙ্গু সংক্রমণের হার এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত সংখ্যা যেমন চোখ রাঙাবে, তেমনি এখনি কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশের মানুষকে ভোগাতে পারে নভেম্বর পর্যন্ত।

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, মশার বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধ না করতে পারলে রোগী বাড়বে। আমরা চিকিৎসা দেবো। কিন্তু নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে। আশেপাশে সবাইকে একত্রিত হয়ে, এমনকি জনপ্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশনের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একশ’র বেশি রোগী ভর্তি থাকলে সে এলাকাকে উচ্চ ঝুঁকির স্পট হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি হিসাব বলছে, চট্টগ্রাম ও বরিশালে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আড়াইশ’র বেশি রোগী। আর ফরিদপুর ও পটুয়াখালীসহ অপর ছয় জেলায় ভর্তি আছেন শতাধিক।