বাংলাদেশের মানুষ করোনা কিংবা হাম, পোলিও, হুপিং কাশির ভ্যাকসিনের সঙ্গে পরিচিত হলেও ডেঙ্গু ভ্যাকসিন তাদের কাছে অপরিচিত একটি নাম। যেভাবে দেশের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেখানে ভ্যাকসিনের আর কোনো বিকল্প দেখছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আসলে কী!
ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে ১৯২০ সালের দিকে। ১০৪ বছরে এখন পর্যন্ত বাজারে অনুমোদিত ভ্যাকসিনের সংখ্যা মাত্র দুইটি। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত ভ্যাকসিনের মধ্যে রয়েছে ডেংভ্যাকসিয়া এবং কিউডেঙ্গা। যারা আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তাদের মূলত ডেংভ্যাকসিয়া দেয়া হয় এবং যারা এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হননি তাদেরকে দেয়া হয় কিউডেঙ্গা।
বাজারে ডেংভ্যাকসিয়া এসেছে মূলত সানোফি নামক কোম্পানির হাত ধরে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসিপি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যারা মূলত আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি তাদের ডেংভ্যাকসিয়া দিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া ৯ বছরের কম শিশুরা এ ভ্যাকসিনের উপযোগী নয় বলে জানান তিনি। যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বা যেসব এলাকায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে সেখানে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। প্রতি ছয় মাস অন্তর তিন ডোজে একজন মানুষকে শূন্য দশমিক ৫ মিলিলিটার পরিমাণ ডেংভ্যাকসিয়া প্রয়োগ করতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, মারাত্মক ডেঙ্গুর বিপরীতে ডেংভ্যাকসিয়ার কার্যকারিতা প্রায় ৮০ শতাংশ। তবে ডেঙ্গুর ধরনের ওপর ভিত্তি করে ডেংভ্যাকসিয়ার কার্যকারিতা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। ডেঙ্গুর সেরোটাইপ-৩ এবং ৪ এর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে সেরোটাইপ-১ এবং ২ এর ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ৫৪ দশমিক ৭ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত।
ডেংভ্যাকসিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামাল দিতে বাজারে এসেছে নতুন ভ্যাকসিন কিউডেঙ্গা। গত চার বছরে কিউডেঙ্গা ১৯টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। যদিও বলা হয়, কেউডেঙ্গা তাদেরই দেয়া উচিত যারা আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হননি; তবে বর্তমানে যে কেউ কিউডেঙ্গা নিতে পারেন বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, দুই ডোজে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। ডেঙ্গুর বিপক্ষে কিউডেঙ্গার কার্যকারিতা ৮০ শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে হাসপাতালে ভর্তির হার ৯০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। যেখানে সেরোটাইপ-১ এবং ২ এর ক্ষেত্রে ডেংভ্যাকসিয়ার কার্যকারিতা কম, সেখানে ৭০ থেকে ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা নিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কিউডেঙ্গা।
চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৭ জন। শুধু চলতি জুলাই মাসের ৩০ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২০০ জন। ভয়াবহ এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিকা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, শিগগিরই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে যাথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
রোববার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সবশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৪১৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৫ হাজার ১৪৭ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ২৭১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ১৩৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ২৮ হাজার ৩২ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২১ হাজার ১০৬ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২২ হাজার ৬৯৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৬ হাজার ৭৮০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।