প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নেয় ৭৬ শতাংশ শিশু

0
257

বাংলাদেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকে পাঁচ বছরের নিচে ৭৬ শতাংশ শিশু। এ ছাড়া নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের নিচে প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন জ্বর ও সর্দির জন্য প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট ডিসকভারি সায়েন্সের’ অন্তর্ভুক্ত স্কোপাস ইনডেক্সড (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ১৭.০৩৩) কিউ-১ জার্নাল ‘ই-ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ নামক আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

২০২৩ সালের ২৯ জুন গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন গবেষক ডেমোগ্রাফি ও হেলথ সার্ভে (ডিএইচএস)-এর ৫৯টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ডেটা নিয়ে এ গবেষণাটি করেন।

গবেষকরা হলেন: পরিসংখ্যান বিভাগের মো. সাব্বির হোসেন, মো. ফখরুল ইসলাম, প্রসেনজিৎ বসাক অর্ক, মাহফুজের রহমান, তানভীর আহমেদ ও মো. আব্দুল বাকের চৌধুরী এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তালহা শেখ আহমেদ। গবেষণাটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন।

গবেষণায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাদের প্রেসক্রিপসন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক এবং সরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অনুমোদনহীন অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শদাতা (যেমন: ফার্মেসি, ওষুধ বিক্রেতা, নার্স, পরিবার ও পরিজন, বন্ধুদের) প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

গবেষণার প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে তানজানিয়া, বাংলাদেশ, কঙ্গো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, কঙ্গো ও চাঁদ দেশের বাচ্চারা ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বে প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে। উপমহাদেশগুলোর মধ্যে এশিয়া মহাদেশের বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে এবং সবচেয়ে কম সেবন করে ওশেনিয়া মহাদেশের বাচ্চারা। এ ছাড়া আয়ের বিবেচনায়, নিম্ন আয়ের দেশের বাচ্চারা মধ্যম আয়ের দেশের বাচ্চাদের থেকে বেশি প্রেসক্রিপসন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের হার কমে। পরিবারের বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্রিপসন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের হারও বৃদ্ধি পায়। তবে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের তেমন তারতম্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার (২৬ জুলাই) অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের সর্দি বা জ্বরের জন্য প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের হার ৭৬.৩ শতাংশ, যা এশিয়ায় সর্বোচ্চ এবং সব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও বিতরণ রোধ করার জন্য আইন প্রয়োগ আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, ফার্মেসি ও অন্যান্য ওষুধ বিক্রেতাদের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের জন্য সরকার ও নীতিনির্ধারকদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এ ছাড়াও স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রচারণা, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিষেবা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের উৎসগুলো উন্নত করা উচিত। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মাধ্যমে যুক্তিসংগত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রচার এবং বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা অনেকাংশে কমানো সম্ভব বলে তিনি যোগ করেন।