১. হালকা কিংবা প্রচুর জ্বরের সঙ্গে পেট ব্যথাটা এবার খুব কমন লক্ষণ ডেঙ্গু জ্বরে । সঙ্গে মাথা ব্যথা কিংবা ঠান্ডা কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়েও রোগী আসতে পারে। বমি, পাতলা পায়খানা হলে বাড়তি সাবধানতা নিন।
২. জ্বর যতই হোক, ডেঙ্গু পজিটিভ হলেই বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না। সঙ্গে কিছু বিপদ চিহ্ন থাকতে হবে-
যেমন- * তীব্র পেট অথবা মাথা ব্যথা * যা খাচ্ছে তাই বমি করা * প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া * মুখে কিছুই খেতে না পারা, শুধু এটা থাকলেও ভর্তি করা জরুরি। * খিঁচুনি বা অজ্ঞান হওয়া, নেতিয়ে পড়া, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসা * শ্বাসকষ্ট হওয়া * ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া
৩. জ্বরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য তা না হলে ৫ম দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে আবার ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। ৩দিনের পরে হতে ৫ম দিন পর্যন্ত টেস্ট পজিটিভ আসার সম্ভাবনা নেই।
৪. ওষুধ খাওয়ানোর সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করবেন;
* জ্বরের ১ম তিন দিন ভুলেও অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করবেন না। *অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক বা এনএসএআইডি জাতীয় ব্যথার ওষুধ বাচ্চাকে দেওয়া যাবে না। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ঘন ঘন দেবেন না, এতে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। *অযথা খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন না, একই কথা আইভি স্যালাইন দেওয়ার বেলাও। এসব ক্ষেত্রে উল্টো ফলও হতে পারে শরীরে পানি ও খনিজ লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে। *যাদের কিডনি, হৃৎপিণ্ড বা অন্য কোনো জটিল রোগ আছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখবেন। *অতিরিক্ত ওজনের বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরে তাড়াতাড়ি কাবু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এদের দিকে বাড়তি নজর রাখা প্রয়োজন।
৫. যাদের কোনো বিপদ চিহ্ন নাই, তারা বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকবে ও প্রচুর পানি তরল জাউ স্যুপ শরবত ফলের রস খাবে।
৬. দেখা যায়, সাধারণত জ্বর ২ থেকে ৩ দিন থেকে হঠাৎ চলে যায়। আবার ৫ থেকে ৬ দিনের দিন ফিরে আসে। জ্বর চলে যাওয়ার সময়ই অধিকাংশ বাচ্চার শরীরে বিপদ চিহ্নগুলো দেখা দেয় ও হুট করে বাচ্চার শারীরিক অবনতি ঘটে। কাজেই জ্বর চলে গেলেই নিশ্চিন্ত মনে হাফ ছাড়বেন না। ওই সময় বাচ্চার আরও বেশি যত্ন নিন ও খেয়াল রাখুন।
৭. ডেঙ্গু মশা বাসা ও আশপাশে জন্মাতে না দেওয়া, মশারি টানানো, মশার ওষুধ, রিপিলেন্ট ব্যবহার করা ও পুষ্টিকর খাবার ও পানি পান করে সুস্থ সবল থাকাটাও জরুরি ডেঙ্গু জ্বর মোকাবিলার জন্য।
জেনে রাখুন
★ ডেঙ্গু মানেই প্লেটলেট কমে গিয়ে রোগী খারাপ হয়ে যায় না। প্লেটলেট ১ লাখে নামলেও তা নরমাল।,এমনকি, ৩০/ ৪০ হাজারেরও অনেক সময় কোনো সমস্যা হয় না। বরং এ জন্য অযথা প্লেটলেট বা রক্ত দিলে রোগী খারাপ হয়ে যেতে পারে। আবার প্লেটলেট স্বাভাবিক থাকা অবস্থায়ও বিভিন্ন কারণে রোগী খারাপ হয়ে যেতে পারে।
★ কারণ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীকে অযথা মুখে বা শিরা পথে স্যালাইন দেওয়া উচিত না। একমাত্র অভিজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক হিসেব করে নির্দিষ্ট সময় পর পর মেপে মেপে স্যালাইন দেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। কাজেই ডেঙ্গু হলেই স্যালাইন খাওয়া বা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে!
লেখক: ডা. লুনা পারভীন, এমবিবিএস, ডিসিএইচ। শিশু বিশেষজ্ঞ, বহির্বিভাগ, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট শ্যামলী