পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেশি

0
145
ছবি: সংগৃহীত

গত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেশি। ২০২০ কিংবা ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার ছিলো ০ দশমিক ৫০ এবং ০ দশমিক ৪৫ ভাগ। অথচ এ বছর তা ০ দশমিক ৫৫ ভাগ।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নাজমুল আহসান জানিয়েছেন, ভাইরাসের ধরন, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাইডলাইন না মানায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।

ফারজানা বেগম নামে এক নারী এক সপ্তাহ আগে ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়ে দুদিনের মাথায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন দিন ধরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। এর আগে একবার শকে গিয়ে ফিরেছেন। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে আবারও তাকে ঘিরে ব্যস্ততা ছিল চিকিৎসকদের। আবারও পেট ফুলে গেছে, নেমে গেছে রক্তচাপ। দিশেহারা তাই স্বজনরা।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য বরাদ্দ ৫২৫ নম্বর ওয়ার্ডে শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ফিরেছেন শক থেকে। রাফিয়া নামে এক রোগীর তিন দফায় অবস্থা হয়েছিল সংকটাপন্ন। তার মা জানান, প্লাস থাকছে না। ওঠানামা করছে।

তবে এবারের ডেঙ্গুতে এমন পরিস্থিতি অনেকটাই পরিচিত চিকিৎসকদের কাছে।

এদিকে বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে সাভারের আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিদিনই ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালটির এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, এবারের পরিস্থিতি গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটা খারাপ। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার যেখানে ছিল ০.১৮ থেকে ০.৫০ পর্যন্ত, এবার ১৭ জুলাই পর্যন্ত সেই হার ০.৫৫ ভাগ।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাজমুল আহসান জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী তিনটি ফ্যাক্টর। ভাইরাসের ফ্যাক্টরে একই সঙ্গে ডেঙ্গুর চারটা ধরনেরই রোগী পাওয়ায় বাড়ছে ঝুঁকি। আবার সেরোটাইপ টু এবং থ্রিতে আক্রান্ত বেশি হওয়ায় রোগী দ্রুত শকে চলে যাচ্ছে। কার্যকর থাকায় একাধিক ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। আবার একাধিকবার আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ছে বিভিন্ন সেরোটাইপে আক্রান্তের সংখ্যা। পরের ফ্যাক্টর রোগী যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে তারা আছেন ঝুঁকিতে। এ ছাড়া বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতীরা আর যাদের ওজন বেশি, তারও একই শঙ্কায়। এ ছাড়া অসচেতনতা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তৃতীয় ফ্যাক্টর চিকিৎসা গাইডলাইন না মেনে চিকিৎসা দিলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।

তিনি আরও বলেন, দেখা যাচ্ছে রোগীর যখন ফ্লুইড লাগবে না, তখন তাকে বেশি করে সেটি দেয়া হচ্ছে; যখন রক্ত লাগবে না, তখন সেটা দেয়া হচ্ছে। আবার প্লাটিলেট বলতে গেলে দরকারই নেই, সেটাও দেয়া হচ্ছে। আবার প্লাজমাও দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত কিছু, অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রচলিত চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে; যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটাও রোগীর মৃত্যুর আরেকটি কারণ।

সে ক্ষেত্রে রোগীর অতিরিক্ত বমি, পেট ফুলে যাওয়া, যেকোনো স্থান থেকে রক্তক্ষরণ, হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো বিপদচিহ্ন দেখা দিলে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।